কর্পোরেট সখা মোদী

মোদী জমানায় কর্পোরেটের বিপুল মুনাফার সঙ্গে চড়া হারে বেড়েছে কর মকুব। কেন্দ্র নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিনিয়োগ টানতে কর্পোরেট করে ছাড় দিলেও তাতে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়েনি, হয়নি নতুন কর্মসংস্থান। গত পাঁচ বছরে চার লক্ষ কোটি টাকার উপরে কর্পোরেট কর মকুব হলেও তাতে শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসেনি।

এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী দেদার কর্পোরেট কর ছাড়ের কথা জানিয়ে বলেছেন, দেশে নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কর্পোরেটদের কর ছাড় দেওয়া হয়। শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আনতে ২০১৬ সাল থেকে কর আইন সংশোধন করে কর্পোরেট কর ধারাবাহিকভাবে কমানো হয়েছে। কিন্তু সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে বিপুল কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা নতুন বিনিয়োগ হয়ে ফিরে আসেনি। অন্যদিকে গত পাঁচ বছরে দেখা গেল কর্পোরেট মুনাফা প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। কেন্দ্রের ২০২৩-২৪ সালের আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট জানিয়েছে, গত ১৫ বছরের তুলনায় এই সময়ে সর্বাধিক হারে মুনাফা করেছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। একই সঙ্গে মন্ত্রী জানিয়েছেন, কর্পোরেট কর মকুবের সঙ্গে অনাদায়ী বকেয়া কর্পোরেট করের পরিমাণও বেড়ে চলেছে।

দেদার কর্পোরেট কর ছাড়ের ব্যাখ্যায় জানা গিয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে ফিন্যান্স অ্যাক্ট সংশোধন করে কর্পোরেট করে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কর্পোরেট করে শেষ ২০১৯ সালে বড় রকমের ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কর্পোরেটদের শিল্পে নতুন বিনিয়োগ বাড়াতে এই ছাড় দেওয়া হয়। এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো, শিল্পে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন রাজ্যে শিল্পের প্রসার বাড়ানোর লক্ষ্যে করে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থান, শিল্পের প্রসার, মজুরি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি— এই সময়ে কোনওটাই সম্ভব হয়নি। ধাপে ধাপে কর মকুব হার বেড়েছে, এতে সরকারের কোষাগারে প্রত্যক্ষ কর বাবদ আয় বিপুল কমেছে।


এদিকে কর্পোরেট করের ছাড় বৃদ্ধি করায় কর মকুব ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ এই পাঁচ বছরে হয়েছে যথাক্রমে ৯৪ হাজার কোটি টাকা, ৭৫ হাজার কোটি, ৯৬ হাজার কোটি, ৮৮ হাজার কোটি এবং ৯৮ হাজার কোটি। এর ফলে প্রত্যক্ষ কর বাবদ পাঁচ বছরে ৪ লক্ষ ৪৩ হাজার কোটি টাকার মতো সরকারের আয় কমেছে। অন্যদিকে বিনা কর্পোরেট ক্ষেত্রে এই প্রত্যক্ষ কর ছাড় অনেক কম। তাতে পাঁচ বছরে কর ছাড়ে মকুব হয়েছে যথাক্রমে ৮ হাজার কোটি টাকা, ৭ হাজার, ৯ হাজার, ১০ হাজার এবং ১২ হাজার কোটি টাকা। মোট ৪৬ হাজার কোটি টাকা কর বাবদ আয় কমেছে। এদিকে ব্যক্তি হিসাবে অবিভক্ত হিন্দু পরিবারে প্রত্যক্ষ করে ছাড় এই সময়ে বেড়েছে। তা পাঁচ বছরে ৬ লক্ষ কোটি টাকার উপর তাদের প্রত্যক্ষ কর মকুব হয়েছে। তিনটি ক্ষেত্র মিলে এতে প্রত্যক্ষ করে পাঁচ বছরে মোট কর ছাড় দেওয়া হয়েছে ১৩ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা।

কর্পোরেট ও ধনীদের উপর প্রত্যক্ষ করে মোদী সরকার বারে বারে কর ছাড় বাড়ানোয় শিল্পে বিনিয়োগ না বাড়লেও তাদের মুনাফা সম্পদ বেড়েই চলেছে। ২০২৪ সালে সর্বাধিক মুনাফা করেছে রিলায়েন্স, তারপরেই রয়েছে মোদীঘনিষ্ঠ আদানি গোষ্ঠী। দেশে মোট ১০টি কর্পোরেট সংস্থার মুনাফা সর্বাধিক হারে বেড়েছে। আবার এই সময়ে অপ্রত্যক্ষ কর যা পণ্যের উপরে চাপানো হয় এবং স্বাভাবিকভাবে পণ্য কেনায় সেই করের বোঝা টানতে হয় সাধারণ মানুষকে। সেই প্রত্যক্ষ করে ছাড় মিলেছে খুবই কম হারে।

কর্পোরেটকে একদিকে যেমন বিপুল কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে কেন্দ্রের কাছে কর্পোরেটদের থেকে পাওনা অনাদায়ী বকেয়া কর জমছে বিপুল হারে। দেশে জুন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ কর বকেয়া রয়েছে ৪৭ লক্ষ ৫২ হাজার কোটি টাকা। এবং অপ্রত্যক্ষ কর বকেয়া রয়েছে ৭ লক্ষ ১ হাজার কোটি টাকা । এদিকে যে ৪৭ লক্ষ কোটি টাকা প্রত্যক্ষ কর বকেয়া তার মধ্যে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা হলো কর্পোরেট প্রত্যক্ষ কর। বাকি বকেয়া কর অতি ধনীদের। ১০ কোটি টাকার উপর বকেয়া কর রয়েছে যাঁদের, তাঁদের বকেয়া করের পরিমাণ হলো মোট ৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ বন্ধ করে কর্পোরেটদের স্বার্থরক্ষা করাই এখন মোদী সরকারের লক্ষ্য।