পূর্ব প্রকাশিতর পর
তারপর দেখি, ম্যানেজারটা আমার দিকে কি রকম বেয়াদবের মতো ফিক্ ফিক্ করে হাসছে। ওর তা হলে হয়েছে। কিংবা আমার। অথবা উভয়ের।
আর এ-স্থলে থাকা নয়।
টলটলায়মান, পড়পড়ায়মান হয়ে জীপে উঠলুম। সেও এক বিপদ। দেখি দু-খানা জীপ। দুটোই ধুঁয়োটে কিন্তু হুবহু একই রকম। কোনটায় উঠি? শেষটায় দেখি আমার পাশে আমারই মতো কে একজন দাঁড়িয়ে হুবহু আমারই মতো, তার টুপির ফুন্নাটি পর্যন্ত। দুজনাতে দুই জীপে উঠলুম।’’
আমি বললুম, ‘‘দুটো জীপ না কচু।’’
দাদা বললে, ‘‘বুঝেছি, বুঝেছি, তোকে আর বুঝিয়ে বলতে হবে না। শান্ত হয়ে শোন। তারপর গাড়ি যায় কখনো ডাইনে ঢাকা, আর কখনো বাঁয়ে মতিহারী। তবে কি ড্রাইভারটা—? সে তো সর্বক্ষণ আমারই পিছনে ছিল। তারপর দেখি সেই অন্য জীপটাও ঢাকা মতিহারী করছে একদম পাশে পাশে থেকে। ওমা! তারপর দেখি চারটে জীপ। সেও না হয় বুঝলুম। কিন্তু তারপর, মোশয়, সে কী কাণ্ড! চারখানাই উড়তে আরম্ভ করল।’’
আমি শুধালুম, ‘‘উড়তে?’’
‘‘হ্যাঁ উড়তে। জীপটাই তো ছিল ঠায় দাঁড়িয়ে। ধুয়ো খেয়েছিল আমাদের চেয়েও বেশী।
হাওয়ায় উড়তে উড়তে ঘুমিয়ে পড়লুম। এবং শেষ পর্যন্ত বাঙলোয় পৌঁছলুম।
ভাগ্যিস বেশী ধুঁয়ো মগজে যায়নি। আপন পায়েই ঘরে ঢুকলুম।
সামনেই দেখি তোর ভাবী। আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকালেন। বাপস্। তারপর অতি শান্ত কণ্ঠে— কিন্তু কী কাঠিন্য কী দার্ঢ্য সে কণ্ঠে—শুধালেন, ‘আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?’ আমি কিছু বলিনি।’’
দাদা থামলেন।
আমি আড্ডাকে বললুম, ‘আমার ভাবী সাহেবা অতিশয় পুণ্যশীলা রমণী, পাঁচ বেকৎ নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, তসবী টপকান। শমসুল্-উলেমার মেয়ে।’
রক শুধালে, ‘ওটার মানে কি চাচা?’
আমি বললুম, ‘পণ্ডিত-ভাস্কর। তেদের মহামহোপাধ্যায়ের অপজিট্ নাম্বার।’
রক শুধালে, ‘তারপর?’
আমি বললুম, ‘তদনন্তর কি হল জানিনে। বৌদি দাদার হাল থেকে কতখানি আমেজ করতে পেরেছিলেন তাও বলতে পারিনে, কারণ ঠিক সেই সময়ে ভাবী সায়েবা তাঁর স্পিশালিটি চারপরতী পরোটা ও দেখতে বজ্রের মতো কঠোর খেতে কুসুমের মতো মোলায়েম শবডেগ্ নিয়ে ঢুকলেন। আমরা খেতে পেলুম বটে কিন্তু কাহিনীটি অনাহারে মারা গেল।’
মশাদা বললে, ‘বিলকুল্ গুল্।’
আমি পরম পরিতৃপ্তি সহকারে বললুম, ‘সাকুল্যে। তাই না বলেছিলুম, গাঁজার গুল।
অর্থাৎ গুলের রাজা গুলম্গীর। তোরা আমাকে আজ ঐ টাইটিলটি দিলি না।’
(ক্রমশ)