মাথা নত করুন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রাষ্ট্রসংঘের তদারকিতে গণভােট’ চেয়েছিলেন, নাকি নাগরিকত্ব ইস্যুতে তিনি শুধু ‘জনমত’ চেয়েছেন বলে এখন যে দাবি করছেন সেই শব্দবন্ধের লড়াইয়ের চেয়েও অনেক বড় ব্যাপার হল নাগরিকত্ব নিয়ে জট কাটানাের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর আন্তরিক আবেদন।

এই জটিলতা সীমান্তের বাইরেও ভারতের সমীকরণের ওপর প্রভাব ফেলেছে- যেমন বাংলাদেশ মন্ত্রী পর্যায়ের সফর বাতিল করেছে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সফর বাতিল হয়েছে এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ভারতীয়-মার্কিন কংগ্রেস সদস্য প্রমীলা জয়পালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকার করেছে। শেষােক্ত ক্ষেত্রে ইস্যুটা অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন— কাশ্মীর।

মােদ্দা বিষয়টা হল অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলি বৈদেশিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলছে, যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বক্তব্য রেখেছেন তার ভিত্তি কিন্তু এসব বিষয় ছিল না। তাকে এই কারণে কৃতিত্ব দিতে হবে যে দেশের মধ্যে তিনিই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তাঁর আবেদনকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন।


কাকতালীয় ব্যাপার হল শুক্রবার তিনি যখন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আবেদন জানালেন সেদিনই কেরলের সিপিএম সরকার জানিয়েছে যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের তার বিরােধিতা করবে। কম করে ৯ জন মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রের উদ্যোগের বিরােধিতা করেছে। এটা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটা নাটকীয় সন্ধিক্ষণ যেখানে সিপিএমের প্রবীণ নেতা তথা কেরলের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী একটা গভীর আবেগের বিষয়ে একই তরঙ্গে বিরাজ করছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব সাহসের সঙ্গে দেশজুড়ে বিবাদের দুই ইস্যুতে একগুঁয়েমি মনােভাব ত্যাগ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী প্রতিবাদের কাছে মাথানত করার আবেদনও জানিয়েছেন। বর্তমান বিজেপি সরকারের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, ‘অটলজি (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী) যদি আজ জীবিত থাকতেন তাহলে তিনি তাঁকে (মােদিকে) রাজধর্ম পালন করার কথা বলতেন’।

স্মরণ করা যেতে পারে, মােদি ১০০১ সালে যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন রাজ্যে গণহত্যার ব্যাপারে বাজপেয়ী তাঁকে রাজধর্ম পালনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয়, বিরুদ্ধবাদীদের সঙ্গে নিয়ে চলার ব্যাপারে তিনি বাজপেয়ীর পদাঙ্ক অনুসরণে ব্যর্থ। ইতিহাসে যেসব বিপর্যয়ের কথা উল্লিখিত রয়েছে তার মধ্যে একটা অভিন্ন যােগসূত্র- সবই জনগণের একটা অংশের অমঙ্গলসাধনের পরিকল্পিত প্রয়াস।

রাজভবনের টুইটের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শব্দবন্ধ নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে বলেছেন, ‘আমি বলেছি রাষ্ট্রসংঘের তদারকিতে আমাদের। দেশের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সিএএ ও এনআরসি প্রশ্নে জনমত নেওয়া হােক’। আশা করা যায় এরপর শব্দবন্ধ নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটবে। না হলে কে ভারতের নাগরিক, সেই মূল বিষয়টি থেকে দৃষ্টি ঘুরে যাবে।