বই ও পেন

মালালা ইউসুফজাই (Photo: IMDb)

তালিবানদের বুলেট মালালা ইউসুফজাইকে স্তব্ধ করতে পারেনি। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর পাকিস্তানের সােয়াত উপত্যকায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মালালাকে গুলি করেছিল তালিবানরা। তারপর সাত বছর কেটে গেছে, আজও মালালা স্কুলের শিশুদের কল্যাণের জন্য সরব। আর তাঁর উদ্যোগ শুধু তাঁর দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সীমান্তের এপারে কাশ্মীর উপত্যকার স্কুলের শিশুদের নিয়েও তিনি ভাবিত। তাদের পক্ষ নিয়েও মালালা আওয়াজ তুলেছে। ৫ আগস্ট থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় পড়াশুনা লাটে উঠেছে। 

৩৭০ ধারা বাতিলের মর্মান্তিক পরিণতি হিসাবে সেখানে শিক্ষা ব্যাপারটাই থেমে গেছে। মালালা’র একটা বিখ্যাত উক্তি ছিল আমাদের বই ও পেনই হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। গত রবিবার রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বকালের সর্বকনিষ্ঠ নােবেল পুরস্কার প্রাপক মালালা শিক্ষার সন্ধানে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আফগান-পাক সীমান্ত অঞ্চল কন্যা শিশুদের ও সাধারণভাবে কাশ্মীর উপত্যকার ছাত্রছাত্রীদের লক্ষ্য করেই তাঁর এই আহ্বান। 

তালিবানরা ভীষণভাবে নারীশিক্ষার বিরােধী। এর সঙ্গে একটা কুসংস্কারও জড়িয়ে আছে। কিন্তু কাশ্মীর উপত্যকায় উপদ্রুত পরিস্থিতির কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানাের সাহস পাচ্ছেন না। ফলে উপমহাদেশের উত্তেজনাময় এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে শিক্ষার উদ্দেশ্যটাই পরাভূত হচ্ছে। তাই মালালা কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শিশুদের স্কুলে ফিরে যেতে সাহায্য কল্পতে রাষ্ট্রসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছে। এটা একটা মৌলিক অধিকার, যা রাষ্ট্রসংঘকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনও সুযােগ দেবে না। 


একটা বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে সমগ্র বিশ্বের প্রতি মালালার এই বার্তা। এই চিত্রের দু’টি দিক তাঁকে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। প্রথমত, ৪০ দিনের বেশি সময় ধরে ছত্রছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারছে না। আর আরেকটি দিক হল আতঙ্কে মেয়েরা ঘরের বাইরেই বেরতে চাইছেনা। যেদিক থেকেই ভাবা যাক না কেন ভারত ও পাকিস্তানের একটা বড় অংশে ঘড়ির কাটা পিছনের দিকে ঘুরতে চলেছে। মালালা সেইসব বিষয়েই জোর দিয়েছে যা হৃদয়ের খুব কাছাকাছি। 

ইমরান খানের মতাে লােকরা কাশ্মীর নিয়ে নিন্দায় সরব, এমনকি পরমাণু যুদ্ধের হুমকিও তাদের মুখে শােনা যাচ্ছে। কিন্তু মালালা সেই পথে হাঁটেননি। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিচারে পাকিস্তান কদাচিৎ এইরকম চরম ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে। দেশের প্রশাসন এই ধাক্কার ব্যাপারে অবহিত। কিন্তু ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া ইমরান খানের মতাে লােকজন তা মানতে চাইছেন না। 

আরও দুঃখের বিষয় হল বিজেপি ও শিবসেনার কিছু নেতা মালালার বক্তব্যের সমালােচনা করেছেন। তারা মালালাকে পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের কল্যাণের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শিক্ষার জন্য বাড়ির বাইরে বেরিয়ে প্রায় প্রাণঘাতী হামলার সম্মুখীন হয়েও মালালা তার লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। তাঁর ১৬তম জন্মদিনে তিনি রাষ্ট্রসংঘকে বলেছেন, একটি শিশু, একজন শিক্ষক, একটি বই ও একটি পেন বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে। শিক্ষাই শেষ কথা। প্রায় দু’মাস হল কাশ্মীরে স্কুল ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। মালালা ইউসুফজাই বীরের মতাে লড়াই করছে। রাষ্ট্রসংঘ্নে সমস্ত সমর্থন তাঁর প্রাপ্য।