বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃতিপ্রেম তাঁর প্রেমিক প্রকৃতিতে আন্তরিক না হয়ে বরং অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। সেদিক থেকে রবীন্দ্রনাথের কথা দূরে থাকুক, বঙ্কিমচন্দ্রের সৌভাগ্য থেকেও তিনি বঞ্চিত। রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রেমিক প্রকৃতিতে চিরসবুজ। দাম্পত্যজীবনের বাইরে তাঁর প্রেমিক প্রকৃতি হৃদয়স্পর্শী। শুধু তাই নয়, তাঁকে নিয়ে আলোচনায় তাঁর প্রেমিকসত্তা অবিচ্ছিন্নপ্রায়। অন্যদিকে, পাগড়িশোভিত রাশভারি প্রকৃতির মধ্যেও বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর প্রেমিকের দৃষ্টিটি কত মনোরম করে তাঁর রচনায় মেলে ধরেছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথম স্ত্রী ষোলো বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করলেও তাঁর সেই ষোড়শী মোহিনীর রূপসুধায় বিমুগ্ধ বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে হৃদয়লোকে চিরস্থায়ী করে রেখেছিলেন। এজন্য দ্বিতীয়বার দ্বারপরিগ্রহ (১৮৬০) করেও প্রথমের আলোর রোশনাই ছিল অমলিন। তাঁর কবিতা ও উপন্যাসে সেই কিশোরী রূপসীর কথা ফিরে ফিরে এসেছে। প্রসঙ্গত স্মরণীয়, এগারো বছরের বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে ছয় বছরের মোহিনীর বিয়ে হয়েছিল ১৮৪৯-এ।
মোহিনীর অকাল প্রয়াণে ১৮৫৯-এ দশ বছরের দাম্পত্যজীবনের ছেদ পড়ে। অন্যদিকে বঙ্কিমচন্দ্রের দ্বিতীয় স্ত্রী রাজলক্ষ্মীও ছিলেন অসাধারণ মোহময়ী সুন্দরী। তাঁদের দাম্পত্যপ্রেম বঙ্কিমচন্দ্র অকপটে স্বীকার করেছেন। তাঁর উপন্যাসে দাম্পত্য প্রেমের শ্রেষ্ঠত্বের নেপথ্যে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। শুধু তাই নয়, তাঁর সুন্দরী নায়িকাদের মধ্যেও রাজলক্ষ্মীকে খুঁজে পেতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। বঙ্কিমচন্দ্রের পাণ্ডিত্যের নিরস কঠিন মুখোশের অন্তরালে তাঁর প্রেমিক দৃষ্টির পরশ পাঠকমানসেও সঞ্চারিত হয়ে পড়ে। সেদিক থেকে বিভূতিভূষণ বড়ই অভাগা। তাঁর প্রকৃতিপ্রেমের আভিজাত্যের বিস্তৃতিতে প্রকৃত প্রেমের ঠাঁই মেলানো দুরূহ হয়ে ওঠে। যেন বিভূতিভূষণের প্রকৃতির হাতছানিকে উপেক্ষা করে মানবীয় প্রেমের অবকাশ ছিল না। শুধু তাই নয়, মনে হতে পরে পারিবারিক জীবনেও তাঁর বন্ধনভীরু প্রকৃতির সক্রিয় উপস্থিতিতে কখনওই প্রেমের অন্তরিক পরশ নিবিড় হতে পারে না।
অন্যদিকে তাঁর আধ্যাত্মিক চেতনার নিবিড় হাতছানি তাঁকে আনমনা করেছিল বলে তাঁর উদাসীন মনের সচলতাও জনমানসে আরও সমৃদ্ধি লাভ করে। একে প্রকৃতিপ্রেমের অচ্ছেদ্য বন্ধন এঁটে বসেছিল, তার ওপর আধ্যাত্মিকতার অপ্রাকৃত পরিসর তাতে সক্রিয় হওয়ায় আপনাতেই সেই জনবিচ্ছিন্ন প্রকৃতিতে মানবীয় প্রেম উচ্চকিত হতে পারে না। অথচ বিভূতিভূষণের প্রেমিক প্রকৃতিটি তাঁর প্রকৃতিপ্রেমের মতো সত্য ও সবুজ। শুধু তাই নয়, তাঁর পারিবারিক জীবনের পরতে পরতে রয়েছে অমোঘ আকর্ষণবোধ। সেখানেও তাঁর নিখাদ ভালোবাসার পরিসর সংগুপ্ত তো ছিলই না, বরং উন্মুক্তপ্রায়। প্রেমিক হিসেবে বিভৃতিভূষণের আন্তরিক বিভূতিও তাঁর ভূষণ মনে হয়। শুধু তাই নয়, প্রেমের প্রতি নিবেদিত প্রকৃতিতেও তিনি অনন্য, অসাধারণ। সেখানে শুধু দাম্পত্যপ্রেমই নয়, তার বাইরেরও তাঁর স্বচ্ছন্দ ও অনায়াস বিচরণ বর্তমান।
বিভূতিভূষণের প্রথম স্ত্রী গৌরীর দাম্পত্যজীবন মাত্র এক বছরের। চতুর্দশী গৌরী পূর্ণ ষোড়শী হতে পারেননি। অথচ বিভূতিভূষণ তাঁকে বয়ে চলেছেন আজীবন।
তাঁর স্মৃতিকথাতেও গৌরীর কথা এসেছে বারবার। বিচ্ছেদের মাধ্যমে যেমন প্রেমের গভীরতা স্পটতা লাভ করে, ক্ষেত্রান্তরের মধ্যে তেমনই তার প্রভাব সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভূতিভূষণ গৌরীর মৃত্যুর প্রায় তেইশ বছর পরে অর্থাৎ ছেচল্লিশ বছর বয়সে কল্যাণী তথা রমাকে বিয়ে করেছিলেন। অথচ সেই বিয়ের বাসরঘরেও গৌরীর সদম্ভ উপস্থিতি। ভাতৃবধূ যমুনা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘উপল-ব্যথিত গতি’তে জানিয়েছেন : ‘দিদির (রমা/কল্যাণী) কাছে শুনেছি ওঁদের ফুলশয্যার রাত্রে বড় ঠাকুর শুধু মার কথা ও প্রথমা স্ত্রী গৌরীদির কথা বলেছিলেন এবং বলতে বলতে তাঁর চোখ জলে ভরে এসেছিল। দিদিও না কেঁদে থাকতে পারেনি। বড় ঠাকুর বলেছিলেন, জানো কল্যাণী, গৌরীর ফুলশয্যা প্রচুর চাঁপাফুল দিয়ে হয়েছিল।… চাঁপাফুলের প্রতি বড় ঠাকুরের একটি অসীম ভালবাসা ও মমত্ববোধ ছিল। ঐ ফুল তাঁর প্রিয় ছিল বলে আমরা ঘাটশিলাতে এবং দিদি ব্যারাকপুরের বাড়িতে চাঁপাগাছ লাগিয়েছিল।’ অন্যদিকে গৌরীর লেখা চিঠিগুলি বুকের পাঁজরের ন্যায় আগলে রেখেছিলেন বিভূতিভূষণ। প্রথমদিকে সেগুলি তিনি পকেটে নিয়ে বেড়াতেন।
সহপাঠীবন্ধু নীরদচন্দ্র চৌধুরীর নজরে তা এসেছিল। শুধু তাই নয়, গৌরীর নকশা করা হাতপাখাও বিভুতিভূষণ আগলে রেখেছিলেন, তাও তাঁর চোখে পড়েছে। ‘The Hand Great Anarch!’-এ তিনি লিখেছেন : ‘I always noticed a packet of papers in his breast pocket, and an embroidered hand-made fan by his pillow. He never referred to them, nor did I ask. But I could easily guess that the packet contained the few letters his wife had written to him, and that the fan was made by her.’ অন্যদিকে সেই স্মৃতিবহ চিঠিগুলি অতি যত্নে রেখেছিলেন বিভূতিভূষণ। যমুনা ও কল্যাণী দুজনেই সেই চিঠি দেখেছিলেন এবং পড়েওছিলেন। যমুনার কথায়: ‘….খুব পাতলা পাঁজির কাগজের মতো সাদা পেডের কাগজে কাগজে গৌরীদি বড় ঠাকুরকে চিঠি লিখেছিলেন। সেই পেডের কাগজের উপর আবার একটি ডানা মেলে উড়ে যাওয়া পাখীর ছাপ ছিল আর তার নীচে লেখা ছিল ‘যাও পাখি বোল তারে / সে যেন ভোলে না মোরে।’ বিভূতিভূষণ যে ভোলেননি, তা স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকার মধ্যেই প্রতীয়মান। তাঁর গৌরী অতুলনীয়া। তাই পাড়ার নতুন বউ দেখেও তাঁর অতৃপ্ত মনের খোলসটি বেরিয়ে আসে। বিভূতিভূষণের ভাগ্নী উমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে (‘অন্তরঙ্গ বিভূতিভূষণ’) সেকথা সজীব হয়ে ওঠে, ‘গৌরী যেমন নিচু মুখে সন্ধ্যাবেলায় তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালত, পায়ে তোড়া মাথায় আঁচল তেমন মুখ আর দেখলাম কই?’ বিভূতিভূষণ তাঁর লক্ষ্মীশ্রী সমন্বিত গৌরীকে হরের ন্যায় আপন করে যাপন করেছিলেন। তাই বলে এজন্য তাঁর কল্যাণীর প্রতি প্রেমবোধের অভাব ছিল না।
আসলে বিভূতিভূষণ আদ্যন্ত প্রেমিক প্রকৃতির। বয়সের ভার তাঁকে কখনও ভারী করতে পারেনি। প্রেমের পরশে তাঁর সহজাত সজীবতা আপনাতেই ঊর্মিমুখর। পনেরো বছরের কল্যাণীকে ছেচল্লিশ বছর বয়সে আপন করে নেওয়ার পরিসরে বিভূতিভূষণের উচ্ছ্বাস গোপন থাকেনি। কত সহজে তাঁর প্রেমানুভূতি নিবিড় হয়ে উঠেছে। ১৯৩৯-র ২০ নভেম্বর পরিচয়ের বছরখানেকের মধ্যে পরিণয় (৩ ডিসেম্বর ১৯৪০)। ১৯৪০-এর ১১ ডিসেম্বরে লেখা চিঠিতে বিভূতিভূষণ তাঁর সদ্য পরিণীতাকে অকপটে তাঁর প্রেম নিবেদন করে জানিয়েছেন : ‘…তাই তো কল্যাণী, তুমি শেষকালে আমার স্ত্রী হয়ে পড়লে? আমার যে স্ত্রী আছে এখনও যেন সে-কথা আমার মনেই হয় না, যেন বিশ্বাস হয় না।… মনে মনে কতদিন থেকে তোমার মতই মেয়ে চেয়েছিলুম— স্নেহময়ী, ভাবোচ্ছ্বাসময়ী, সেবাপরায়ণা, সুরসাধিকা… হয়তো বা বহুদূর অতীতের কোন জীবনে মধুর অলস দিনগুলিতে, অজ্ঞাত পথতলে, ভুলে যাওয়া গ্রামসীমার বেষ্টনীর মধ্যে তুমি ছিলে আমার সঙ্গিনী….।’ অথচ সেই কল্যাণীর কাছেই বিভূতিভূষণ গৌরীর প্রতি তাঁর তীব্র অনুরাগের কথা ব্যক্ত করেছেন অকপটে। কল্যাণীর হাসিতে গানে ভরপুর জীবন।
তাঁদের সেই অসম বয়সের পারস্পরিক প্রেমানুভূতি কত তীব্র ছিল যেখানে গৌরীর অনুপ্রবেশ সহজসাধ্য হয়ে ওঠে, তা সাধারণভাবে ভাবাই যায় না। আসলে বিভূতিভূষণ যেমন কল্যাণীর মধ্যে গৌরীকে খুঁজে ফিরেছিলেন, তেমনই কল্যাণীও গৌরীতে আপন হতে চেয়েছিলেন। ‘উৎকর্ণ’-এ বিভূতিভূষণ সে কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন : ‘বারাকপুরে কল্যাণী আর আমি রোজ নদীর ঘাটে নাইতে যাই দু’বেলা। ওপারে মাধবপুরের চরের দৃশ্য বড় সুন্দর।… কল্যাণীর কাছে গৌরীর কথা বল্লুম… কাল ছিল সেই দিন, যেদিন বহুকাল আগে আমি মাঝেরগাঁ থেকে হেঁটে এসেছিলুম, গৌরীকে প্রথম নিয়ে এসেছিলুম এই গাঁয়ে।… অনেকদিন পরে আকাঙ্ক্ষিত বারাকপুরের জীবনকে আবার ফিরিয়ে পেয়েচি। নতুন সংসার নতুন ঘর-কন্না। এই চেয়ে এসেছিলুম বহুদিন থেকে।’ সেদিক থেকে বিভূতিভূষণের ‘গৌরিকুঞ্জ’কে কল্যাণী আপন করে নিতে পেরেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৩৪৬-এ আদর্শবাদী শিক্ষাবিদ অশোক গুপ্ত বিভূতিভূষণের কাছে পাঁচশ টাকা ঋণমুক্ত হওয়ার জন্য তাঁর ঘাটশিলার বাড়িটি তাঁকে প্রদান করেছিলেন। বিভূতিভূষণ সেই বাড়িটির নাম দিয়েছিলেন ‘গৌরীকুঞ্জ’। অবশ্য সেই কুঞ্জের বাইরেও বিভূতিভূষণের কুহুরব শোনা গেছে।
গৌরী ও কল্যাণীর মাঝের তেইশ বছরে যে-দুজন বিভূতিভূষণের হৃদয়ে আলো ফেলেছিলেন, তাঁদের প্রতি তাঁর প্রেমিক প্রকৃতি অত্যন্ত সজীব। স্বগ্রাম বারাকপুরের খুকী তো তাঁর স্নেহের ভিখারিণী থেকে মর্মসহচরী হয়ে উঠেছিল। তাঁর অকৃত্রিম সজীব প্রাণের পরশে বিভূতিভূষণ অসমবয়সি জেনেও প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, একসময় তাঁকে বিয়ের কথাও বলেছিলেন। ১৯৩৪-এর ১০ জুনের দিনলিপিতে বিভূতিভূষণ লিখেছেন : ‘খুকুর সঙ্গে সন্ধ্যেবেলা কত কথা হলো। আমি বল্লুম, তুই বাঁড়ুয্যে না হোলে তোকে বিয়ে করতুম। ও হাসলে— বল্লে, আপনি চলে গেলে আমার মন পালাই পালাই হবে।…’ এখনে পাঠকমনে ‘আরণ্যক’-এর সত্যচরণের সেই ভানুমতীকে বিয়ে করার সদিচ্ছার কথা জেগে উঠতে পারে। আসলে বিভূতিভূষণের সেই প্রেমিক সত্তাটি ছিল একান্তভাবেই নিখাদ আন্তরিক। এজন্য তাঁর মনের জানালাটি সকলের কাছে দরজা হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, তাঁর স্বচ্ছ মনে কোনওরকম আবিলতা ছিল না। যখন তিনি সুশিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত সুপ্রভা চৌধুরীর পরশ পেলেন, তখন তাঁকেও আপন করে নিতে বেশ সময় লাগেনি। বরং তাঁর প্রেমিক হৃদয়ের প্রসারতা দিয়ে তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেছেন।
১৯৩৮টি ১০ অক্টোবরে চিঠিতে তাই জানিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি: ‘কত লোকের অর্থাৎ কত মেয়ের সঙ্গে তো তারপর আলাপ হোল— কিন্তু তোমার সঙ্গে প্রথম আমলে যে ভালবাসা, এমনটি আর হোল কৈ আর কারো সঙ্গে? তা হয় না। একজায়গায় একবার হোলে দু’জায়গায় হয় না। আমি কথাটা এতদিন ভাল বুঝতাম না— আজকাল বুঝি।’ শুধু কি তাই? তাঁর প্রেম কত গভীর হতে পারে, তার পরিচয়ও নিবিড় হয়ে উঠেছে। ১৯৩৭-এ পুজোর সময়ে লেখা চিঠিতে সুপ্রভাকে জানিয়েছেন বিভূতিভূষণ : ‘তোমার পার্সেলটা গত বৃহস্পতিবার হাটে পেয়েছিলুম। জিনিসগুলো ভারী চমৎকার হয়েচে… বালিশ ঢাকনিটা বেজায় সৌখীন, ও বালিস যে কোথায় পাতবো বুঝতে পারচি নে। রুমাল ভারী সুন্দর, তোমার হাতের কাজ বলে জিনিসগুলো আমার কাছে এত মূল্যবান হয়ে উঠবে যে ওসব আমি আর ব্যবহার করতে পারবো না। পাছে এটা ছিঁড়ে যায়, পাছে ওটা ধোপার বাড়ী কাচতে গেলে হারিয়ে যায়। মাঝে মাঝে ব্যবহার করবো।’ সেই সুপ্রভার প্রতি সশ্রদ্ধ অনুরাগ বিভূতিভূষণ আজীবন বহন করেছেন।
শুধু তাই নয়, সুপ্রভার ভবিষ্যৎ জীবন নিয়েও তাঁর দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। এরূপ গভীর প্রেমের প্রেমিক হওয়া সত্ত্বেও বিভূতিভূষণ তাঁর জীবনের অভিমুখকে গতিশীল রাখতে পেরেছিলেন। স্বয়ং সুপ্রভা চৌধুরী তাঁর ‘স্মৃতির রেখা’য় সেকথা জানিয়েছেন, ‘যদিও তাঁর মধ্যে একটা নির্লিপ্ত উদাসীনতা ছিল, তাঁর জীবনের অবিরল গতিময়তাই তার উৎস মনে হোত।’ প্রেমের সার্থকতা তো পরিণতিতে নয়, প্রবহমানতায়। সেদিক থেকে বিভূতিভূষণ আজীবন তার প্রেমকে বহন করেছেন, কিন্তু বাহন করেননি। তাঁর সাহিত্যে সেই প্রেম আটকে পড়েনি। কেননা তিনি তা চাননি বলেই। অন্যদিকে তা সত্য বলে চিঠিপত্রে দিনলিপিতে আন্তরিক করে তুলেছেন। অথচ তাঁর এই মহত্বের দিকটিতে আলো না পড়ায় তা পাঠকসাধারণের কাছে অনালোকিত অন্তরায় হয়ে রয়েছে ।