বাঙালির ভাষা

ফাইল চিত্র

শ্রী সুকুমার সেন

 

পূর্ব প্রকাশিতর পর


তবে কখনো কখনো –কে বিভক্তি হয়— যথা: গোরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের গান মনকে মাতিয়ে তোলে। যাকে তাকে মারতে নেই।
গৌণ কর্মকারকে কর্মের দিক বা গতি নির্দেশ করে। গৌণ কর্মকারকে –কে বিভক্তি হয়, যেমন—রামকে পড়ালুম, তিনি অতিথিকে উত্তম রূপে খাওয়ালেন।

করণ: যে পদের সাহায্যে ক্রিয়াপদের কাজ সম্পন্ন হয় তা হল ‘করণ’ কারক। করণকারকে কখনো কখনো বিভক্তিযুক্ত হয়, কখনো কখনো আলাদা শব্দ (যাকে বলে অনুসর্গ) বসে। উদাহরণ দিই: (বিভক্তিযুক্ত) সে হাতে (হাত+এ) মাথা কাটে, মুখে ( মুখ+এ) সব কথা বলা যায় না, পায়ে (পা+এ) চলা পথ, চোখে (চোখ+এ) না দেখলে বিশ্বাস হয় না; (অনুসর্গ যুক্ত) চামচে দিয়ে ক্ষীর খাচ্ছে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না, ঘুষের দ্বারা সব কাজ হয় না, চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না। (করণকারকের একটা বিশিষ্ট প্রয়োগ হলে সঙ্গ বা একত্র কাজ করা বোঝানো।) আমি তার সঙ্গে ইস্কুলে যাই, ভাতের সঙ্গে দুধ খাওয়া ভালো, তোমার পিতার সহিত তাহার মুখ দেখাদেখি নাই। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলেছে।

সম্প্রদান: সম্প্রদানকারককে গৌণ কর্মকারকও বলা যায়। এই কারকে কর্মসাধনের প্রতি অগ্রসর হওয়া বোঝায়, সাধিত হওয়া বোঝায় না। ‘বেলা যে পড়ে এল জলকে চল, ‘ঘরেই যারা যাবার তখা কখন গেছে ঘরপানে, পারে যারা যাবার গেছে পারে’, মা ছেলেকে চাঁদ দেখাচ্ছে।
অপাদান: বাক্যমধ্যে যে পদ সমাপিকা ক্রিয়ার দ্বারা অঙ্গহীন (অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন) হয় সে পদকে বলে অপাদানকারক। অপাদানকারকে হয় –এ বা –তে বিভক্তি নয়ত হইতে হইয়া থেকে ইত্যাদি অনুসর্গ যুক্ত হয়। যথা— তিলে তেল হয়; (অনুসর্গ যুক্ত) ‘ভয় হতে তব অভয় মাঝে নূতন জনম দাও’, ‘দূর হইতে নৌকা দেখা গেল’, ইস্কুল থেকে ছেলেরা বেরিয়ে পড়েছে।

সম্বন্ধ পদ: সম্বন্ধ পদে অথবা ষষ্ঠীকারক (অর্থাৎ Case) –র বা –এর যুক্ত হয়। যথা —মানুষের মুখ, গোরুর দুধ, রবীন্দ্রনাথের গান, ছেলের দল, হাতের কাজ, ঘরের ছেলে।

অধিকরণ: এই কারকের অর্থ আধারস্থল। ক্রিয়াটি সেইখানে একটি নির্দিষ্ট স্থান বা কালের মধ্যে শেষ অথবা সম্পন্ন হয়। অধিকরণে –এ, -তেস -এতে বিভক্তি হয়। অথবা বিভক্তি থাকে না। যেমন— সে এতক্ষণ ঘরে পৌঁছেছে, ‘ঘরেতে (ঘর+ -এ –তে) ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে’, বালিশে (বালিশ+এ) মাথা দিয়ে ঘুমোচ্ছে, গাছে আম পেকেছে, ‘প্রেম নদীতে উঠেছে ঢেউ’, খাতায় যা-তা লিখতে নেই। সে ঘর (বিভক্তিহীন অধিকরণ) গেল।

বাংলা ভাষার প্রাচীন ইতিহাস
সুপ্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্যতম শাখা হল ইন্দো-ইরানীয়। এই ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠী দুটি ভাষাগুচ্ছ বিভাগে বিভক্ত ছিল—একটি ভারতীয় আর্য ভাষাগুচ্ছ, আরেকটি ইরানীয়। বাংলা এই ভাষাগোষ্ঠীরই আধুনিক কালের একটি ভাষা। বিশদ প্রমাণের উপর নির্ভর না করেও একথা বলা যায় যে, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী এক দৃঢ় সাংস্কৃতিক এবং ভাষাতাত্ত্বিক বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। ইন্দো-ইউরোপীয়

ভাষাগোষ্ঠীর বিবরণ দিই:
১ আনাতোলীয়: বাণমুখ হিট্টীয়, চিত্রলিপি হিট্টীয়, লুভীয়, লিসীয় এবং পালীয়।

(ক্রমশ)