বাঙালির ভাষা

ফাইল চিত্র

শ্রী সুকুমার সেন

পূর্ব প্রকাশিতর পর

নিজ ঘরে গৃহিণী যতক্ষণ না মজে যায়
ততক্ষণ কি (করে) পঞ্চবর্ণে বিহার করা যায়।
কহন্তি গুরু পরমার্থের বাট।
কর্ম কুরঙ্গ সমাধিক পাট।।
কমল বিকলসিল কহিহ ণ জমরা
কমল-বধূ পিবিবি ধোকে ন ভমরা।। (রচয়িতা—মীননাথ)
বলেন গুরু পরমার্থের উদ্দেশ:
কর্মরূপ হরিণকে ধরবার উপায়
পদ্ম ফুটলে শামুক বলে না
(কিন্তু) কমলমধু পান করতে ভ্রমর ধোঁকায় পড়ে না।
বালচন্দ বিজ্জাবই-ভাসা
দুহুঁ নহি লঙ্গই দুজ্জন-হাসা।
ও পরমেসর হরশির সোহই
ই নিজ্চিঅ নাঅর-মন মোহই।। (রচয়িতা—কোনো বিদ্যাপতি ভক্ত)
বালচন্দ্র (আর) বিদ্যাপতির ভাষা
দুটিতে লাগেনা দুর্জনের উপহাস
ও পরমেশ্বর হরের শিরে শোভা করে
এ নিশ্চয় রসিকের মন মুগ্ধ করে।
প্রত্ন বাংলা : চর্যাগীতি (ঝ)
কাআ তরুবর পঞ্চ-বি ডাল।
চঞ্চল চীয়ে পইঠো কাল।।
দিট করিঅ মহাসুহ পরিমাণ।
লুই ভণই গুরু পুচ্ছিঅ জান।।
সকল সহিঅ কাহি অরিঅই।
সুখ দুখেতেঁ নিচিত মরিআই।।
এড়ি এডু ছান্দক বান্ধ করণক পাটের আস
সুনু পাখ ভিড়ি লাহুরে পাস।।
ভণই লুই আম্হে সাণে দিঠা।
ধমণ চমণ বেণি পাণ্ডি বইঠা।। (লুইপাদের রচনা)
কায় (হল) তরুবর। পাঁচটি ডাল।
চাঁচা ছালে কাল প্রবিষ্ট (হয়েছে)
দৃষ্টি করা হল মহাসুখের পরিমাণ।
লুই বলে গুরুপৃচ্ছা(ই) জ্ঞান।
(হে) সকল সখী, কী করা যায়?
সুখে দুখে (পড়লে) নিশ্চিত-(ই) মারা পড়ে
এড়িয়ে আসা হোক ছাঁদা-বাঁধা ইন্দ্রিয়ের পটুত্বের আশা।
শূন্য পক্ষ-চেপে নেওয়া হোক পাশে।
লুই বলে আমার দ্বারা ইশারায় দেখা হল।
‘ধমন-চমন’ দুই পাড়ি (জমাবার) বৈঠা।।
***
দুলি দুহি পিটা ধরণ ন জাই।
রুখের তেন্তলি কুম্ভীরে খাঅ।।
আঙ্গণ-ঘরয়ণ সুন ভো বিআতী।
কানেট চৌরি নিল অধরাতী।।
সুসুরা নিদ গেল বহুড়ী জাগঅ।
কানেট চোরে নিল কা গই মাগঅই।।
দিবসই বহুড়ী কাউই ডরে ভাঅ।
রাতি ভইলে কামরু জাঅ।।
আইসন চর্যা কক্কুরী পাত্রঁ গাইউ।
কোড়ি মঝেঁ একু হিঅহিঁ সমাইউ। (কুক্কুরীপাদের সম্প্রদায়ের রচনা)
(স্ত্রী) কাছিম দুয়ে প্যাঁড়া (=কেঁড়ে) ধরছে না।
গাছের তেঁতুল কুমিরে খাচ্ছে।
অঙ্গন—ঘরণী ওগো বিধাত্রী (=গিন্নি) শোন;
কর্ণপট্ট (কান সোনা) চোরে নিলে আধ-রাতে
শ্বশুর ঘুমিয়ে পড়েছে। বউড়ী (=বৌ) আছে জেগে
কর্ণপট্ট চোরে নিয়েছে। কোথায় গিয়ে মাগা যায়!
দিনের বেলায় বউড়ী কাকের ডরে ভাবিত হয়।
রাত হলে কামরূপে যায়।
ঐ রকম চর্চা কুক্কুরীপাদের দ্বারা গাওয়া হল
কোটির মাঝে একের হৃদয়ে (এর অর্থ) প্রবেশ করল।।
……………
কাহৈরি ঘিণি মেলি। অচ্ছহু কীস।
বেটিল ডাক পড়অ চৌদীস।।
আপনা মাংসেঁ হরিণা বৈরী।
খনহ ন ছাড় অ ভুকু অহেরী।।
তিণ ন চ্ছুপই হরিণা পিবই ন পাণী।
হরিণা হরিণির নিলঅ ন জানি।
হরিনী বোলঅ হরিণা সুণ হরিআ তো।
এ বণ চ্ছাড়ী হোহু ভান্তো।।
তরসঁন্তে হরিণার খুর ন দীসঅ।
ভুসুকু ভণই মুটা-হিঅহি ণ পইসই।। (রচয়িতা—ভুসুকু)
কার জন্যে(?) ঘরে মেলা। আছ কেমন?
বেড়া (হাঁক ডাক) চারদিকে পড়েছে।


(ক্রমশ)