অস্ত্র হাতে মিছিল

ফাইল চিত্র

আসন্ন রামনবমীতে শ্রীরামের স্তুতি করা হবে ভক্তিভরে। কিন্তু রামনবমীতে বিজেপির সিদ্ধান্ত রাজ্যের সর্বত্র ভিমের গদা সহ অন্যান্য অস্ত্র হাতে এবং তা মানুষকে দেখিয়ে মিছিল কেন? এই প্রশ্নে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনিক এবং কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ মহলে। অস্ত্র হাতে মিছিল রাজপথ অতিক্রম করবে, তা দেখতে তিলোত্তমাবাসী ও রাজ্যের মানুষের কাছে ভালো লাগবে? এ ব্যাপারে রাজ্য প্রশাসন একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে, রামনবমীতে রাজ্যজুড়ে অস্ত্র হাতে মিছিল বের হবে। তাকে সমর্থন করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন সভাপতি এবং প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ। সমর্থন করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, এবার পশ্চিমবাংলায় অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে রামনবমী উদযাপন করা হবে। এই উপলক্ষে রাজ্যে এক কোটি হিন্দু রাস্তায় নামবে এবং শ্রীরামের নামে জয়ধ্বনি দেবে। তিনি এদিন রাজ্যের হিন্দুদের এক হতে বলেছেন, কিন্তু তাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র থাকবে, সেকথা বলেননি। হিন্দু হিন্দু বলেই বিজেপির সর্বভারতীয় এবং রাজ্য নেতারা ডাক তুলেছেন। কিন্তু হিন্দুরা রাজ্যে এক হলে, রাজ্যের অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ কি তাহলে অপাংক্তেয় হিসেবে গণ্য হবে? তারা কি দেশের নাগরিক নন?

সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একা বিজেপির পক্ষে পশ্চিমবঙ্গ দখল করা সম্ভব হবে না। আরএসসেকে মাঠে নামতে হবে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেছেন, হরিয়ানায় সাম্প্রতিক নির্বাচনে সংঘের কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার চালিয়েছে এবং মানুষের সমর্থন চেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ২০২৬-এর নির্বাচনে সংঘের কর্মীদের প্রচারের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে— শাসক তৃণমূলের তখন শেষ দিন ঘনিয়ে আসবে। সংঘের পূর্বাঞ্চলীয় দায়িত্বে থাকা প্রধান বিষ্ণু বসু বলেছেন, আরএসএসের কর্মীরা এখন থেকেই ওই রাজ্যে প্রচার কাজে নেমে পড়বে। প্রসঙ্গত, তিনি বলেছেন, রামনবমীতে অস্ত্র হাতে মিছিল হতেই পারে— এতে আপত্তি কোথায়, তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। বলেন, এটা যদি আইনশৃঙ্খলার বিষয় হয়, তাহলে পুলিশ প্রশাসন তা দেখবে। মহরমের মিছিলে আমরা অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখি, সুতরাং রামনবমীতে অস্ত্র হাতে মিছিল হলে তা দোষের হয়। তবে পুলিশের যদি মহরমে অস্ত্র হাতে মিছিল করা নিয়ে আপত্তি না থাকে, তবে রামনবমীতে অস্ত্র হাতে মিছিল করতে দেওয়া যেতেই পারে। পুলিশ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ মহরমে এ নিয়ে অস্ত্র নিয়ে মিছিলে আপত্তি নেই। রামনবমীতে তা নিয়ে আপত্তি থাকবে কেন?

টানা কয়েকদিন কোনও কোনও বিষয়ে অসংলগ্ন ও শালীনতাহীন বাক্য তাঁর মুখ থেকে বের হওয়ার পর দিলীপ ঘোষ তার জন্য কঠোর সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন। এখন কিছুটা সুর নরম করেছেন এই প্রাক্তন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। রামনবমী উপলক্ষে খড়গপুরে শ্যামমন্দির সংলগ্ন ময়দানে দিলীপবাবু লাঠি খেলার প্রশিক্ষণে যোগ দেন। তিনি লাঠিখেলা দেখে খুব খুশি মনে বলেন, ‘যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে— তারা যাতে আরও সঠিকভাবে লাঠি খেলা শেখে তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসন যে যে হাতিয়ার নিয়ে মিছিলে যোগদানের অনুমতি দেয়, আমরা তা নিয়েই রামনবমীর দিন রাস্তায় বের হব।’ অপরদিকে বিরোধী দলনেতা বলেন, রাস্তা দুটো খোলা— পুলিশের অনুমতি না মিললে, আদালতের অনুমতি নিতে হবে। তা না হলে প্রতিরোধের রাস্তায় হাঁটতে হবে।’


বাম জমানাতেও আমরা ঘটা করে রামনবমী পালন করতে দেখিনি। দেখা যায়নি অস্ত্র হাতে মিছিল। বিজেপির রাজ্যে উত্থানের পর রামনবমী ঘটা করে পালিত হচ্ছে। দু’বছর আগে রামনবমী পালন নিয়ে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছিল— এবার যাতে সেই অশান্তির পুনরাবৃত্তি না হয়, তা দেখা প্রশাসনের দায়দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আবার বিজেপিকেও দেখাতে হবে রামনবমী শান্তিপূর্ণ এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে পালিত হয়। এদিকে আগামী দুর্গোৎসবে বিজয়ার দিন থেকে সংঘের শতবর্ষ উদযাপন কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হিন্দু সমাজ দেশ ও সমাজ পুনর্গঠনের কাজে সংঘের কর্মীদের এগিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।

আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্যই আরএসএসের পূর্বাঞ্চলীয় শাখা খুব উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে রামনবমী পালনের ডাক দিয়েছে। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশও প্রস্তুত যাতে এই রামনবমী পালন নিয়ে কোনওরূপ শান্তিভঙ্গের ঘটনা ঘটে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। যদি সেরকম কিছু হয়, তাহলে পুলিশ তা কঠোর হাতে দমন করবে। রামনবমী উদযাপন হোক শান্তিপূর্ণ ভাবে, তা নিয়ে কারওর কোনও আপত্তি থাকবে না। কিন্তু অস্ত্র হাতে মিছিল এবং শহরের বুকে লাঠি খেলার দাপাদাপি প্রশাসন মেনে নেবে না। সেই সঙ্গে রাজ্য বিজেপি নেতারা যেন উস্কানিমূলক কোনও বক্তৃতা না করেন, তার জন্য তাদের অনুরোধ জানানো হবে।