আত্মনির্ভরতার নমুনা

স্বাধীনতার ছিয়াত্তর বছর পরও ভারত আত্মনির্ভর হয়েছে কিনা একথা বুক ঠুকে বলা যাবে না৷ বেকারত্ব বাড়ছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে না৷ দেশ এখন ভিন রাষ্ট্রে কর্মী সরবরাহের দিকে ঝুঁকে পড়েছে৷ শাসক দল বিজেপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বছরে ২ কোটি কর্মসংস্থানের ঘোষণাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হচ্ছিল৷ কিন্ত্ত এখন ভোটের আগে প্রকাশিত দলীয় ইস্তাহারে সেই দাবির চিহ্নমাত্র নেই৷ দেশকে আত্মনির্ভর করার পরিবর্তে শাসক দলের মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্য থেকে কর্মী পাঠাচ্ছেন ভিনদেশে কাজের জন্য৷
হরিয়ানা থেকে ৫০০ যুবক যাত্রা করেছেন ইজরায়েলে কাজের জন্য৷ তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নবাব সাইনি৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও কথা বলেছেন বিদেশে কর্মপ্রার্থী যুবকদের সঙ্গে৷ হরিয়ানার বর্তমান ও প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রীই চাকরির অভাবে রাজ্য ছেড়ে যাওয়া যুবকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন৷

দেশে যদি কাজের সমস্যা না থাকে, দেশের অগ্রগতি যদি দ্রুতগতিতে হতে থাকে তাহলে কাজের খোঁজে বিদেশে যাবে কেন যুবকরা? যদি ডবল ইঞ্জিন সরকার হলে সব অভাব মিটে যেত তাহলে কেন বিদেশে যেতে হচ্ছে হরিয়ানার যুবকদের? প্রধানমন্ত্রী মোদি যে আত্মনির্ভর ভারতের স্লোগান দিচ্ছেন, হরিয়ানা সরকারের এই কাজ কি তাকে ব্যঙ্গ করছে না?

ইজরায়েল এখন যুদ্ধক্ষেত্র৷ সেখানে যে কোনও মুহূর্তে জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে৷ প্যালেস্তাইনের হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইজরায়েলে কর্মসংকট দেখা দিয়েছে৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার পর থেকে ইজরায়েল প্রায় ৮০ হাজার প্যালেস্তিনীয় শ্রমিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ ফলে সেখানে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়৷ আর এইরকম যুদ্ধরত ইজরায়েলে শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ সরকার৷ এই দুই রাজ্য সরকার বেকারত্ব সামাল দিতে ১০ হাজার শ্রমিক ইজরায়েলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এজন্য হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে চাকরির জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে৷ হরিয়ানার রোহতক শহরের মহর্ষি দয়ানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার আবেদনকারীর জন্য পরীক্ষার আয়োজন করেছিল৷


১০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক প্রয়োজন হলে ইজরায়েল জানিয়েছিল৷ এর মধ্যে রয়েছেন ফ্রেমওয়ার্ক, শাটারিং, কার্পেন্টার, প্লাস্টারিং, সিরামিক টাইলসহ অন্যান্য ধরনের কাজ করার লোক৷ এই কাজের জন্য মাসে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা বেতন পাবেন শ্রমিকরা৷ ওভারটাইমও পাবেন৷ এর জন্য যোগ্যতা দশম শ্রেণি পাশ, তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা, বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে৷ এছাড়া চিকিৎসা, বিমা, খাবার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে৷ প্রার্থীদের কাজের ওপর প্রতি মাসে বোনাসও দেওয়া হবে৷ প্রথম দফায় পাঠানো হয়েছে ৫৩০ জনকে৷ এইভাবে দফায় দফায় ১০ হাজার শ্রমিককে পাঠানো হবে গোলা-বারুদ বিধ্বস্ত গাজা ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে৷

বেকারত্বের জন্য হরিয়ানা সরকারকে বারেবারে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে৷ তবুও শাসক বিজেপি ডবল ইঞ্জিন সরকারের দোহাই দিয়ে চলেছে৷ গত বছর আগস্ট মাসে হরিয়ানা বিধানসভায় পেশ করা তথ্য অনুযায়ী ওই রাজ্যে জুলাই মাস পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার বেকার যুবক-যুবতী কাজের জন্য আবেদন জানিয়েছেন৷ বেকারত্ব যে বিজেপি-শাসিত হরিয়ানার সবচেয়ে বড় সমস্যা, তা ফের একবার প্রমাণ করে দিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নবাব সাইনি এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর৷ নিজের রাজ্যে কাজ না থাকায় ভিনদেশে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বেকার যুবকরা৷ আর সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুক ফুলিয়ে বলছেন, হরিয়ানা থেকে যুবকরা কাজের জন্য যাচ্ছেন ইজরায়েল৷ মোদিজির ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের উদাহরণ এখন হরিয়ানা৷