আগুন জ্বেলেছে অগ্নিপথ

‘জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পারো, সমাধি পরে মোর জ্বেলে দিও’ — সতীনাথের কণ্ঠে গানটি বোধহয় প্রধানমন্ত্রী মোদিজির ভীষণ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সে গান তো বিরহের ছিল।

অথচ মোদিজি যুবসমাজের স্বপ্নের সমাধিতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন। এবং শুধু পছন্দ নয়, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্য ২০১৪ সাল থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

ক্ষমতায় আসার পর বছরে দু’কোটি চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গেলেন। মোদিজি দেশে কোনও নতুন প্রকল্প তৈরি করেননি যাতে বেকার ছেলেমেয়েদের জন্য চাকরিতে নিয়োগ করা যায়।


রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সব বেচে দিয়েছে। তা গত আট বছরে ৮x২=১৬ কোটি চাকরি নিয়োগ না করে দেশের যুব সমাজের সঙ্গে বিজেপির মোদি অ্যান্ড কোং প্রতারণা করেছেন।

এখন আঠারো মাস বাকি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন অতএব ঘোষণা হল ১০ লক্ষ বেকারের চাকরি। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরে ৬০ লক্ষ পদ খালি রয়েছে।

তাহলে ৫০ লক্ষ পদ কি গায়েব করে দেওয়া হল? এসবের হিসাব দেওয়ার দায়বদ্ধতা কোনও মন্ত্রীর নেই।

কিন্তু গোল বাঁধলো যখন ১০ লাখের মধ্যে ৪৬ হাজার ঠিকানা সেনা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হল অগ্নিপথ নামে যে প্রকল্প চালু করতে চাইছে সেই চুক্তির ভিত্তিতে সেনা নিয়োগ প্রকল্পের বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে পুলিশের গাড়ি, বিজেপির পার্টি অফিস, ট্রাক, রেল স্টেশন, সর্বত্র আগুন ধরিয়েছ দেওয়া হয়েছে।

বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, বাংলা সর্বত্র আগুন জ্বলছে।

এমনিতেই দেশে বিষাক্ত নূপুরের ধ্বনিতে বিক্ষোভ, আগুন জ্বলছে। এখন আবার চুক্তি সেনার প্রকল্পের কারণে দেশে আগুন জ্বলছে।

এখন অগ্নিপথ প্রকল্পে কী ছিল। চার বছরের মেয়াদে সেনার নিয়োগ করা হবে সাড়ে ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সীদের (আন্দোলনের চাপে ২৩ বছর করতে বাধ্য হয়েছে)।

বেতন মিলবে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। নিয়োগ প্রক্রিয়ার চার বছরের মেয়াদ শেষে ৩৫ শতাংশকে স্থায়ীভাবে রেখে দেত্তা হবে বাহিনীতে।

তাদের মেয়াদ শেষে এক সপ্তাহে ১১ লাখ ১৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। কোনও পেনশন পাবেন না। অজুহাত সেনাবাহিনীর অর্থ বরাদ্দের অর্ধেক খরচ বহন করতে হয় বেতন ও পেনশন খাতে।

ফলে আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে অর্থের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। কয়েক বছর সেনাবাহিনীতে নিয়োগ হয়নি, অপেক্ষারত তরুণ সমাজের প্রশ্ন, চুক্তি শেষে তাদের ভবিষ্যৎ কী?

২৫ শতাংশে না পড়লে চার বছর নষ্ট, আবার নতুন করে ফের অন্য চাকরির চেষ্টা করতে হবে।

এ তো একপ্রকার রাষ্ট্রের দেশের যুবসমাজের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।

কিন্তু এহেন ঐতিহাসিক প্রকল্পে সারা দেশে বিক্ষোভ, ট্রেনে আগুন ধরানো, বিধায়কদের বাড়িতে বিক্ষোভ প্রদর্শন। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি বাদ যায়নি।

দেশের যুবসমাজ কিন্তু এখন দল হিসেবে নয়, চাকরিপ্রার্থী হিসেবে বিক্ষোভে শামিল হয়েছে। কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের দিকে কিন্তু এক্ষেত্রে তোলা যাচ্ছে না।

এজন্য শাসকদল ভীষণ আপডেট। অন্যসময় লাগিয়ে দেওয়া যেতে এবার নিজেদের চালাকির চালে পড়ে গেছে।

অন্যদিকে প্রাক্তন সেনাবাহিনীর প্রধানরা বিরূপ মন্তব্য করেছেন যে, অতিথি সৈন্য দিয়ে যুদ্ধে জেতা যায় না।

তা ছাড়া ওয়ার রেডি হতে জওয়ানদের সাত থেকে আট বচরের ট্রেনিং লাগে। সেক্ষেত্রে ছ’মাসেই কীভাবে অগ্নিবীরদের তৈরি করা হবে প্রশ্ন উঠেছে।

এখন পিছু হঠে বয়স বাড়ানো, মেয়াদ শেষে চাকরি, ব্যবসার জন্য ঋণ প্রভৃতি চিন্তাভাবনা করছে। কিন্তু দেশের তরুণ সমাজ বুঝে গেছেন সরকার জুমলাবাজে সিদ্ধহস্ত।

আগামী বছর আট রাজ্যে ভোট আর ২০২৪-এ লোকসভা ভোট। অতএব দাও খাইয়ে দাও ঠিকা চাকরি।

পরবর্তীতে কানও নিয়োগে সেনাবাহিনীতে পেনশন দিতে হবে না। পাঁচ বছরের এমপি, মন্ত্রীদের পেনশন বন্ধ করার কথা তো তারা বহলে না।

অতএব এই অগ্নিপথের আগুন তবেই নিয়ে যদি আগের মতনই সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করতে হবে। না হলে যুবসমাজের মনে ক্ষোভের আগুন নিয়ে না কিছুতেই।

কেননা এই যুবসমাজ কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের নয়, এক ধর্মনিরপেক্ষ দেশের যুব সমাজ আজ আন্দোলনের পথে অগ্নিপথের সঠিক রূপায়ণের জন্য।