দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

কিন্তু সুবিদিত বাস্তব ঘটনাসমূহই এই সমস্ত মনগড়া কথাবার্তা খন্ডন করে দেয়। আজ সবাই জানে যে এই সোভিয়েত ইউনিয়নই বর্তমান

সীমানার মধ্যে স্বনির্ভর পোলিশ রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা সুনিশ্চিত করেছিল, এই সোভিয়েত সশস্ত্র বাহিনীই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সরে পোলিশ জনগণকে ফ্যাসিস্ট দাসত্বের কবল থেকে মুক্ত করেছে। পোল্যান্ড যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উদ্যোক্তাদের প্রথম বলিতে পরিণত হয়েছিল তার মূলে ছিল আগ্রাসককে পূর্ব দিকে ঠেলে দেওয়ার সাম্রাজ্যবাদী নীতি। সুতরাং দেখাই যাচ্ছে যে ১৯৩৯ সালের সোভিয়েত-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির তাৎপর্যকে আজ বিকৃত আকারে দেখাতে প্রয়াসী প্রতিক্রিয়াশীল ইতিহাসবিদ আর বুর্জোয়া ভাবাদর্শীদের ‘যুক্তিগুলো’ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ওই মুহূর্তে সোভিয়েত সরকার যে অনন্যোপায় হয়ে পড়েছিলেন তা বহু বুর্জোয়া রাজনীতিক স্বীকার করতেন। রুজভেল্টের সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী গ. ইকেস সোভিয়েত-জার্মান চুক্তি প্রসঙ্গে লিখেছিলেন: ‘আমি রাশিয়াকে দোষ দিতে পারি না। আমার মনে হয় যে এক চেম্বারলেনই সমস্তকিছুর জন্য দায়ী।’


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী স. উত্তলেসত্ত অনুরূপ মত ব্যক্ত করেন: ‘সোভিয়েত-জার্মান চুক্তি সোভিয়েত সরকারকে প্রাধান্য লাভ করার সুযোগ দিল এবং দু’বছর বাদে যখন বহু প্রতীক্ষিত জার্মান আক্রমণ সংঘটিত হল তখন ওই সমস্ত প্রাধান্য সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে বিপুল এক ভূমিকা পালন করল।’

সোভিয়েত সরকারের শান্তিকামী পররাষ্ট্র নীতির গুরুত্বপূর্ণ ফল ছিল ১৯৪১ সালের প্রিল মাসে জাপানের সঙ্গে সম্পাদিত নিরপেক্ষতা চুক্তি। উভয় রাষ্ট্র পরস্পরকে এই প্রতিশ্রুতি দিল যে তারা শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জাপান ও মঙ্গোলিয়া গণপ্রজাতন্ত্রের ভূখণ্ডগত অখন্ডতার প্রতি আর রাষ্ট্রসীমার অলঙ্ঘনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে।

সোভিয়েত রাষ্ট্রের সক্রিয় ও শান্তিকামী লেনিনীয় পররাষ্ট্র নীতি সাম্রাজ্যবাদীদের অপকর্মে বাধা দেয়। তা প্রমাণ করল যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই সর্বপ্রথম এমন এক রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটেছে যা শান্তির মহান ধ্বনি তুলেছে এবং দেশে দেশে ও জাতিতে জাতিতে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন নীতি অনুসরণ করছে।

বুর্জোয়া ইতিহাসবিদেরা সোভিয়েত রাষ্ট্রের যুদ্ধপূর্ব পররাষ্ট্র নীতিকে সর্বতোপায়ে বিকৃত করতে সচেষ্ট। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নকে এই বলে অভিযুক্ত করে যে সে নাকি ফ্যাসিস্ট জার্মানির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাদের উদ্দেশ্য সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ফ্যাসিস্ট জার্মানিকে উস্কানি দিয়ে পশ্চিমী রাষ্ট্রসমূহ যে-অপরাধ করেছে তা থেকে তাদের মুক্ত করা। কিন্তু বিভিন্ন দলিলাদি আর কাগজপত্র বুর্জোয়া ইতিহাসবিদদের ‘যুক্তি’ খন্ডন করে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়ানো যেত। অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক মহাবিপ্লব সূচিত নতুন ঐতিহাসিক যুগের পরিস্থিতির পৃথিবীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো শান্তির এরূপ সুদৃঢ় দুর্গের বিদ্যমানতা সামগ্রিকভাবে সামরিক দুষ্প্রয়াসের অবসান না ঘটালেও অন্তত পক্ষে আগ্রাসী রাষ্ট্রসমূহকে দমন করার এবং ওদের নতুন বিশ্বযুদ্ধ বাধাতে না দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছিল।

(ক্রমশ)