দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

পশ্চিম ও পূর্বের আঘাতগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে পাঠানোর এবং তাকে দুই রণাঙ্গণের মধ্যে চেপে ধরার জন্য আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ যে-সমস্ত পরিকল্পনা নিয়েছিল তা প্রায় বাস্তবায়িত হতে চলেছিল।
সাম্রাজ্যবাদী সরকারসমূহের দোষে যদি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ভেঙ্গে না যেত, তাহলে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হত। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও পোল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের হাতে ছিল ৩১১টি ডিভিশন, ১১,৭০০টি বিমান, ১৫,৪০০টি ট্যাঙ্ক, ৯,৬০০টি ভারী কামান। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রদ্বয় জার্মানি আর ইতালির কাছে ছিল ১৬৮টি ডিভিশন, প্রথম সারির ৭,৭০০টি বিমান, ৮,৪০০টি ট্যাঙ্ক ও ৪,৩৫০টি ভারী কামান।

এহেন জটিল ও বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামনে একটি প্রশ্ন দেখা দিল: সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ আয়োজনের উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আর মিউনিখ জোটের পরিকল্পনাগুলো কীভাবে বানচাল করা যায়? এর জন্য কেবল একটি মাত্র পথ ছিল— জার্মানি প্রস্তাবিত অনাক্রমণ চুক্তি সম্পাদন করা। সেটাই করা হয়েছিল। ১৯৩৯ সালের ২৩ আগস্ট দশ বছরের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। জার্মানির সঙ্গে সম্পাদিত এই চুক্তিটির দরুন সাম্রাজ্যবাদীদের সমস্ত আশাভরসা ভেস্তে গেল এবং তার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার উপর থেকে পশ্চিমের হুমকিটি সরাতে সক্ষম হল ও দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণের জন্য প্রায় দু’বছর সময় পেল।


সেই সঙ্গে সোভিয়েত সরকারের দূরদর্শী নীতি ১৯৩৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে যুদ্ধে জড়িত করার সাম্রাজ্যবাদী প্রয়াস ব্যর্থ করে দেয় এবং সোভিয়েত দেশের বিরুদ্ধে তাদের যুক্ত ফ্রন্ট গড়ার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে অন্তরায় সৃষ্টি করে।

আজ সোভিয়েতবিরোধী সাম্রাজ্যবাদী প্রচারে সোভিয়েত-জার্মান চুক্তিকে ‘অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা’ বলে বর্ণনা করা হয়, যা নাকি ‘ইউরোপে যুদ্ধ অনিবার্য করেছে’।

কিন্তু তা হচ্ছে অসদৃদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা কথা। ফ্যাসিস্ট আগ্রাসন রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল এই চুক্তির জন্য নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি নিয়ে ইংলন্ড ও ফ্রান্সের চাতুরীতে মস্কোর আলাপ-আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার দরুন। সোভিয়েত দেশের বিরুদ্ধে বীভৎস কুৎসা প্রচারে লিপ্ত বুর্জোয়া ভাবাদর্শীরা ১৯৩৯ সালের সোভিয়েত-জার্মান চুক্তিটিকে ‘পোল্যান্ডের চতুর্থ বিভাজন’ বিষয়ক সন্ধি হিশেবে দেখাচ্ছে।

কিন্তু সুবিদিত বাস্তব ঘটনাসমূহই এই সমস্ত মনগড়া কথাবার্তা খন্ডন করে দেয়। আজ সবাই জানে যে এই সোভিয়েত ইউনিয়নই বর্তমান সীমানার মধ্যে স্বনির্ভর পোলিশ রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা সুনিশ্চিত করেছিল, এই সোভিয়েত সশস্ত্র বাহিনীই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সরে পোলিশ জনগণকে ফ্যাসিস্ট দাসত্বের কবল থেকে মুক্ত করেছে। পোল্যান্ড যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উদ্যোক্তাদের প্রথম বলিতে পরিণত হয়েছিল তার মূলে ছিল আগ্রাসককে পূর্ব দিকে ঠেলে দেওয়ার সাম্রাজ্যবাদী নীতি।

(ক্রমশ)