দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

এই প্রটোকল অনুসারে, কোনও একটি পক্ষের উপর সামরিক হামলা ঘটলে তারা পরস্পরকে সামরিক সহায়তা সহ সর্বপ্রকার সাহায্য দিতে বাধ্য ছিল। এবং ১৯৩৯ সালে জাপানী সমরবাদীরা মঙ্গোলিয়া আক্রমণ করা মাত্রই সোভিয়েত ইউনিয়ন অবিলম্বে মঙ্গোলীয় জনগণের সাহায্য এগিয়ে যায়। মঙ্গোলিয়ার ভূখন্ডে প্রবিষ্ট হানাদার বাহিনীগুলো বিধ্বস্ত হয়।

দূর প্রাচ্যে সোভিয়েত সরকার সম্পাদিত অপর গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হল— ১৯৩৭ সালের আগস্ট মাসে চীনের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর। যে-চীন এই ঘটনার দেড় মাস আগেও জাপানের নতুন হামলার শিকারে পরিণত হয় তার সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন ছিল জাপানী সমরবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত একটি দেশের প্রতি এক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সহানুভূতি প্রদর্শন।


১৯৩৭-১৯৪১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনকে জাপানী সমরবাদীদের বিরুদ্ধে তার জাতীয়-মুক্তি যুদ্ধে বাস্তব সহায়তা প্রদান করে। সে তাকে ৯৪০টি কামান, প্রায় ১০০টি ট্যাঙ্ক ৮৮৫টি বিমান ও কয়েক হাজার মেশিনগান জুগিয়েছিল। চীনে ছিল চার সহস্রাধিক সোভিয়েত স্বেচ্ছাসেবক আর সামরিক উপদেষ্টা। সোভিয়েত বৈমানিকরা চীনের আকাশ থেকে শতাধিক জাপানী বিমান ভূপতিত করেছে। চীনা জনগণের স্বাধীনতা ও সুখের জন্য জীবন দিয়েছিল অনেক সোভিয়েত যোদ্ধা। ওই বছরগুলোতে চীনা সংবাদপত্র ‘মিন বাও’ লিখেছিল, ‘সোভিয়েত দেশ কমিউনিস্টদের ও চীনা জনগণের আশা ভঙ্গ করেনি, মারাত্মক বিপদের মুহূর্তে সে-ই প্রথম চীনকে সাহায্য করেছে।’

আপন স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত জাতিসমূহকে আন্তর্জাতিকতাবাদী সহায়তা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। ফ্যাসিস্ট আগ্রাসককে প্রতিরোধ দানের লক্ষ্যে ১৯৩৯ সালের ১৭ এপ্রিল সে সোভিয়েত-ইঙ্গো-ফরাসি সহযোগিতার একটি বিশদ পরিকল্পনা উপস্থাপিত করে। তাতে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পারস্পরিক সহায়তা এবং ইউরোপের কিছু দুর্বলতর দেশকে ত্রিশক্তির প্রত্যাভূতি প্রদান সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব ছিল।

এই উদ্দেশ্যে ১৯৩৯ সালের আগস্ট মাসে মস্কোয় তিনটি শক্তির— সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সামরিক প্রতিনিধিদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সোভিয়েত প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্শাল ক্লিমেন্ত ভরোশিলভ এবং প্রতিনিধিদলের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হল যে ফ্যাসিস্ট আক্রমণ আরম্ভ হলে সে বৃহৎ সামরিক শক্তি খাড়া করবে: ১৩৬টি পদাতিক ও অশ্বারোহী ডিভিশন, ৫ হাজার ভারী কামান, ৯-১০ হাজার ট্যাঙ্ক, ৫,৫০০ জঙ্গী বিমান।

কিন্তু দেখা গেল যে প্রয়োজনীয় দলিল স্বাক্ষরের ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলের কোন ক্ষমতাই নেই। এই সমস্ত আলাপ-আলোচনা প্রসঙ্গে ইংরেজ রাজনীতিক ডি. লয়েড জর্জ ব্যঙ্গ করে বলেছেন: লর্ড হ্যালিফ্যাক্স হিটলার আর গেরিঙের সঙ্গে দেখা করেছেন।

(ক্রমশ)