দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

সোভিয়েত ইউনিয়ন হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যা ফ্যাসিস্ট জার্মানি ও ইতালির আগ্রাসনমূলক ক্রিয়াকলাপের তীব্র নিন্দা করে এবং যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠনের উদ্দেশ্যে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন দৃঢ়তার সঙ্গে ইতালীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইথিয়োপিয়া ও আলবানিয়ার জাতিসমূহের আর নাৎসি আক্রমণের বিরুদ্ধে চেকোস্লোভাকিয়ার জনগণের পক্ষ সমর্থন করে।

এই ঘটনাটি সত্যি যে মিউনিখ ষড়যন্ত্রের প্রাক্কালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পারস্পরিক সহায়তা বিষয়ক চুক্তি অনুসারে ফ্যাসিস্ট জার্মানির আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য চেকোস্লোভাকিয়াকে বাস্তব ও জরুরী সামরিক সাহায্য দানের প্রস্তাব দিয়েছিল। এই উদ্দেশ্যে যুদ্ধ-প্রস্তুতি নিয়ে থাকে ৭৬টি পদাতিক ও অশ্বারোহী ডিভিশন, ৩টি ট্যাঙ্ক কোর ও ২২টি স্বতন্ত্র ট্যাঙ্ক ব্রিগেড, ১২টি বিমান ব্রিগেড ও লাল ফৌজের অন্যান্য ইউনিট।


কিন্তু ইংলন্ড ও ফ্রান্সের চাপে পড়ে চেকোস্লোভাকিয়া এই সাহায্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং ফ্যাসিস্ট জার্মানির কাছে আত্মসমর্পণ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত অন্যান্য দেশকে বাস্তব সহায়তা দিতে প্রস্তুত ছিল এবং সেরূপ সহায়তা দিয়েছিল।

১৯৩৯ সালের মার্চ মাসে মস্কোয় অনুষ্ঠিত হয় সারা-ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টির (বলশেভিক) ১৮শ কংগ্রেস। তাতে জার্মানি, জাপান ও ইতালির আক্রমণাত্মক ক্রিয়াকলাপের ঘোর নিন্দা করা হয় এবং ফ্যাসিস্ট জোটের তরফ থেকে বিশ্ব শান্তির প্রতি ও বহু রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি বিরাট হুমকিটি দেখিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠন না করার লক্ষ্যে ব্রিটেন ও ফ্রান্স অনুসৃত নীতির প্রকৃত স্বরূপটি উদঘাটন করা হয়।

পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘…হস্তক্ষেপ না করার নীতির মানে হচ্ছে আগ্রাসনে ইন্ধন জোগানে, এর মানে হচ্ছে যুদ্ধ বাধানো, সুতরাং এটাকে বিশ্বযুদ্ধে পরিণত করা। অহস্তক্ষেপের নীতিতে আছে আগ্রাসকদের কুকর্মে লিপ্ত হতে বাধা না দেওয়ার প্রয়াস ও বাসনা; যেমন, জাপানকে চীনের সঙ্গে, আরও ভালো হয় যদি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে, যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাধা না দেওয়ার প্রয়াস ও বাসনা; যেমন, জার্মানিকে ইউরোপীয় ব্যাপারাদিতে জড়িয়ে পড়তে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে না দেওয়ার প্রয়াস ও বাসনা; যুদ্ধের সমস্ত অংশগ্রহণকারীকে মারাত্মকভাবে যুদ্ধের কাদায় জড়িয়ে পড়তে দেওয়া, চুপিচুপি তাদের এ ব্যাপারে অনুপ্রামিত করা, তাদের পরস্পরকে দুর্বল ও কাহিল করতে দেওয়ার প্রয়াস ও বাসনা, আর যখন তারা যথেষ্ট শক্তিহীন হয়ে পড়বে তখন নতুন শক্তি নিয়ে মঞ্চে অবতীর্ণ হওয়া, অবশ্যই ‘শান্তির স্বার্থে’ সংগ্রাম করা এবং যুদ্ধের দুর্বল-হয়ে-পড়া অংশগ্রহণকারীদের উপর নিজস্ব শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস ও বাসনা।’

(ক্রমশ)