২০০২ সালে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে বেত্রাগরে বড়মুদি পাড়ায় প্রতিষ্ঠা হয় বেত্রগর শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই এই বিদ্যালয়ের প্রধান সহায়িকা পদে যোগদান করেছিলেন গ্রামেরই এক গৃহবধূ শঙ্করী হাজরা। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে ২২ টি বছর। আর সেই স্কুল থেকে অবসর নেবার সময় সারাদিন শুধু চোখের জলে ভাসালেন শঙ্করী হাজরা। গ্রামবাসী এবং অভিভাবকরাও চোখের জলে বিদায় জানালেন প্রিয় শিক্ষিকাকে। আর শিক্ষিকা তাঁর আদরের ছোট ছোট পড়ুয়াদের তিথি ভোজনের আয়োজন করেন।
প্রথম সেই পাড়ার একটি আটচালায় শুরু হয় এই স্কুল। দুজন সহায়িকা নিয়ে। একজন তিনি নিজে আর একজন অশোক পাঁজা। পরবর্তীতে চারটি ক্লাসের জন্য আরো একজন দিদিমনি নিয়োগ হয়। সেই আটচালা ঘিরে একটি স্টোর রুমের মত ঘর করে দীর্ঘ দিন চলতে থাকে স্কুল। কিন্তু তিনি এই গ্রামের মানুষ আবার প্রধান সহায়িকা সর্বদাই তিনি চেষ্টা করতে থাকেন একটি স্কুল বাড়ি করতেই হবে। পাড়ার ছেলে মেয়েদের জন্য। কারণ প্রাইমারি স্কুল এখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার। অবশেষে রাজি করালেন তাঁরই আত্মীয় লক্ষী নারায়ন চক্রবর্তীকে। লক্ষী নারায়ন বাবু স্কুলের জন্য ৭ শতক জায়গা দান করলেন। আর সেই জায়গাতেই গড়ে উঠলো স্কুল বাড়ি, হলো রান্নাঘর। সরকারী সহযোগিতায় এবং তাঁর নিরবিচ্ছিন্ন চেষ্টায় ভালোই চলতে লাগলো স্কুল।
পিছিয়ে পড়া এলাকার ছাত্র ছাত্রীরা পেতে থাকলো শিক্ষার আলো। শেষ দুবছর শঙ্করী হাজরা একা চালিয়েছেন এই স্কুল। শেষ দুবছরে নেননি একটিও সিএল। আজকে বিদায় বেলায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিষন্ন তিনি। জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন এই কচি কাঁচাদের সঙ্গে। বিদায় বেলায় পাড়ার সকল মানুষ আসছেন তাঁর কাছে দেখা করতে। সকলেরই চোখে জল। প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা সকলেই হাজির ছিলেন তাদের প্রিয় দিদিমণির আজকের এই বিদায়ের দিনে। কেউ আসে ফুলের তোড়া, কেউ নিয়ে আসে পেন, বই আবার কেউ গলায় পরিয়ে দেয় মালা। সকলেই চোখের জল ফেলে তাদের বড় দিদিমণির জন্য। স্কুলের স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর দিদিরাও মন খারাপ করে বসে ছিলেন। তাঁদের চোখেও আজ জল। আর এই দিনে বড় দিদিমনি তাঁর প্রিয় ছাত্র ছাত্রীদের করালেন তিথী ভোজন। লুচি, ছোলার ডাল, আলুর দম আর বোঁদে। সবাই মিলে একসাথে বসে চলল তিথি ভোজন।