রাস্তা দখলের প্রতিবাদের জেরে ইটাহারের ১৩টি পরিবারকে সামাজিক ‘বয়কট’

ইটাহারে মোড়লদের ফতোয়া দুই পরিবারের উপর। জানা গিয়েছে, যাতায়াতের গ্রামীণ রাস্তা বেআইনিভাবে দখল করে ঈদগাহ ময়দান সম্প্রসারণের প্রতিবাদ করাতেই ‘সমাজিক বয়কট’-এর এই নিদান! উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লকের রামডাঙা বেকিডাঙা গ্রামে গত প্রায় এক বছর ধরে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন আবদুল ও হবিবুরের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আরও ১১টি পরিবারের উপরেও সেই নিদান দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর খানেক আগে রামডাঙা এলাকায় গ্রামীণ রাস্তা দখল করে ঈদগাহের ময়দান বড় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান গ্রামের যুবক আবদুল গফফর ও হবিবুর রহমান। অভিযোগ, প্রতিবাদের জেরেই গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী মাতব্বর তাঁদের পরিবারকে সামাজিকভাবে একঘরে করে দেওয়ার নিদান দিয়েছেন। তখন থেকেই কার্যত সমাজচ্যুত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। চলতি মাসের ২৩ ডিসেম্বর আবদুল গফফরের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতরা সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় আরও ১১টি কৃষক পরিবারকেও সামাজিক বয়কটের নিদান দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ফলে বিপাকে পড়েছেন তাঁদের পরিবারগুলিও। স্থানীয় দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে গেলেই বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলা তো দূরের কথা, বাড়িতে কোনও আত্মীয়ও আসতে পারছেন না বলে অভিযোগ।


একঘরে হয়ে পড়া পরিবারগুলির দাবি, এই দীর্ঘ সময়ে বিডিও দপ্তর থেকে থানার দরজায় দরজায় ঘুরেছেন তাঁরা। জব্বার হোসেন, মাজেদুর রহমান-সহ একাধিক মাতব্বরের বিরুদ্ধে ইটাহার থানায় লিখিত অভিযোগও জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবদুল গফফর, হবিবুর রহমান, সামিন রহমান-সহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি।

এ বিষয়ে ইটাহার ব্লকের বিডিও দিব্যেন্দু সরকার বলেন, ‘ঘটনাটি বিস্তারিত ভাবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে ইটাহার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিলকিস পারভীন দাবি করেন, ‘এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অন্যদিকে, ইটাহার থানার আইসি গৌতম চৌধুরী জানান, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য ওই পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলা হবে।’