খায়রুল আনাম
একেই বলে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। শান্তিনিকেতনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করতে শান্তিনিকেতনকে বোলপুর থানা থেকে বিচ্ছিন্ন করে শান্তিনিকেতনের মধ্যেই পৃথকভাবে গড়ে তোলা হয়েছে শান্তিনিকেতন থানা এবং একটি মহিলা থানা। এই দুই থানার মধ্যেই এবং মহিলা থানার নিকটবর্তী এলাকায় রয়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পৈতৃক বাড়ি ‘প্রতীচী’। এখনও অমর্ত্য সেন নিয়মিত এই বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখানে অষ্টপ্রহর নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রাখা হয়েছে। এর সামনেই রয়েছে বিশ্বভারতীর শিক্ষাভবন এবং আন্তর্জাতিক ছাত্রীনিবাস ‘মৈত্রী’। এই রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এখানকার মানুষেরা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে থাকেন যে, এই এলাকাটি এক অর্থে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো অবস্থায় রয়েছে। সন্ধ্যা নামলেই এই এলাকাটি চলে যাচ্ছে সমাজবিরোধীদের দখলে। কিন্তু প্রশাসনের দিক থেকে প্রয়োজনীয় কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কোনও ব্যবস্থা যে নেওয়া হয়নি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ৩ ডিসেম্বর রাতে এখানে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে।
এখানকার শিক্ষাভবন মোড়ে সুরজিৎ মণ্ডল ও তাঁর ভাই একটি মোমোর দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী এবং অন্যান্যরা খাওয়াদাওয়া করে থাকেন এখানে। কিছুদিন আগেই কয়েকজন মদ্যপ যুবক এসে মোমো বিক্রেতা সুরজিৎ মণ্ডলের কাছে হাজার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। সুরজিৎ মণ্ডল জানান, তাঁর মা ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ায় মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতেই তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। তাই তাঁরা তিনশো টাকার বেশি দিতে পারবেন না। এতেই ওই মদ্যপরা হম্বিতম্বি করে তিনশো টাকা না নিয়ে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে চলে যান।
আর হুমকির সেই ‘দেখে নেওয়ার’ প্রমাণ দিতেই ৩ ডিসেম্বর রাতে ওই মদ্যপরা দলবদ্ধভাবে এসে সুরজিৎ মণ্ডল ও তাঁর ভাইয়ের উপরে হামলা চালান বলে অভিযোগ। ওই এলাকার আলো নিভিয়ে দিয়ে মোমোর দোকান এবং সেখানকার সমস্ত আসবাবপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দুই ভাইকে ব্যাপক মারধর করা ছাড়াও জামাকাপড় ছিঁড়ে তাঁদের প্রায় বিবস্ত্র করে গোটা এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে দিয়ে চলে যান। অথচ সেই সময় পুলিশ বা বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীরা কেউ দুই ভাইকে রক্ষা করতে এবং ভাঙচুর ঠেকাতে এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পুলিশ এবং বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীরা এগিয়ে না আসায় তাঁরাও প্রাণভয়ে বাড়ির বাইরে আসতে পারেননি। আক্রান্ত সুরজিৎ মণ্ডল এ ব্যাপারে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করলেও দুষ্কৃতীদের সন্ধান পায়নি বলেই জানা গিয়েছে।