সুন্দরবনের দ্বীপাঞ্চলের শিক্ষক ভোলানাথ দাসের জাতীয় স্বীকৃতি

নিজস্ব চিত্র

সুন্দরবনের দ্বীপাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর জীবনযাত্রা। সীমিত সুযোগ, সামান্য পরিকাঠামো আর একরাশ স্বপ্নকে সঙ্গী করে চলা সেই মানুষটি আজ জাতীয় স্তরে সম্মানিত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিক্ষক ভোলানাথ দাস সম্প্রতি দিল্লির সংবিধান ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পেয়েছেন ‘জাতীয় লাল বাহাদুর শাস্ত্রী সম্মান ২০২৫’। দেশের নানা প্রান্তের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মধ্যে এই স্বীকৃতি অর্জন তাঁর জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।

তবে এই গৌরবের পেছনে লুকিয়ে আছে এক দীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের গল্প। সুন্দরবনের এক নির্জন দ্বীপে বড় হওয়া এই মানুষটির জীবন শুরু হয়েছিল সাধারণ পথে— হাতে ছিল অল্প সুযোগ, পাশে সীমিত পরিকাঠামো, কিন্তু হৃদয়ে ছিল অফুরন্ত স্বপ্ন।

ভোলানাথ দাস পেশায় একজন শিক্ষক হলেও, তাঁর ভূমিকা শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘শিক্ষা মানে কেবল পরীক্ষার প্রস্তুতি নয়, জীবনের প্রস্তুতি।’ এই দর্শনকে সামনে রেখে ২০০৯ সাল থেকেই নিজের উদ্যোগে গ্রামের বহু ছাত্রছাত্রীকে বিনামূল্যে স্পোকেন ইংরেজি শেখাচ্ছেন তিনি। তাঁর মতে, গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী ইংরেজিকে ভয় পায়, কিন্তু এই ভয় দূর করার একমাত্র পথ হল সঠিক পরিবেশ, উৎসাহ ও ধৈর্য।


তাঁর পরামর্শ, সরকারি স্কুলগুলোতে ডিজিটাল ক্লাসরুম, ইন্টারঅ্যাকটিভ শেখার পরিবেশ এবং বিশেষ উৎসাহমূলক প্রশিক্ষণ চালু করা উচিত, যাতে দ্বীপাঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও আধুনিক শিক্ষার সুযোগ পায়।

শিক্ষার পাশাপাশি ভোলানাথ দাসের আরেক মিশন হল আর্থিক সাক্ষরতা ছড়িয়ে দেওয়া। তিনি একজন স্বীকৃত গবেষক এবং বহু বছর ধরে দেশের তরুণ প্রজন্মকে বিনিয়োগ ও শেয়ারবাজার সম্পর্কে সচেতন করছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘School of Day Traders (SODT)’ আজ বাংলার তরুণদের কাছে আর্থিক জ্ঞানের জনপ্রিয় এক কেন্দ্র। তাঁর তৈরি ‘SODT Swing Master Premium’ কৌশল বাজারে নতুন দিশা এনে দিয়েছে। তবে তিনি সর্বদা বলেন, ‘শেয়ারবাজার ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু ঝুঁকিকে বুঝে শেখাই সাফল্যের চাবিকাঠি।’

আজ তিনি কেবল শিক্ষক নন, সমাজসেবকও বটে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের আত্মনির্ভর করে তুলছেন নিজের উদ্যোগে। জাতীয় স্তরে স্বীকৃতি পেলেও, ভোলানাথ দাস এখনও সেই দ্বীপাঞ্চলের মাটির মানুষ— যিনি নিজের শিকড়কে আজও ভোলেননি, বরং প্রতিটি ছাত্রের সাফল্যে খুঁজে পান নিজের জীবনের সার্থকতা।