নন্দীগ্রামে ‘বেপাত্তা’ প্রাক্তন বিডিও! বেতন নিয়ে দোটানায় ব্লক প্রশাসন

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে বেপাত্তা বিডিও-কে ঘিরে কার্যত এক অদ্ভুত প্রশাসনিক জট তৈরি হয়েছে। যাঁর কোনও হদিশ নেই দু’মাসের বেশি সময় ধরে, যিনি অফিসে নেই, কাজে নেই, অথচ খাতায়-কলমে তিনি এখনও ‘আছেন’। আর সেই ‘আছে’–থাকার জেরে তৈরি হয়েছে বড়সড় বিভ্রান্তি। প্রশ্ন উঠেছে, এই পরিস্থিতিতে কি একই ব্লকের দু’জন বিডিওর বেতন হবে?

এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির দিশা খুঁজে না পেয়ে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বর্তমান বিডিও নাজিরুদ্দিন সরকার সরাসরি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে চিঠি লিখেছেন। আবার জেলাশাসক চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্য দপ্তরে। ফলে প্রশাসনের অন্দরে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে।

ব্লক প্রশাসনের দাবি, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সীমিত সময়ের জন্য একটি ব্লক থেকে প্রাক্তন ও বর্তমান— দু’জন বিডিওরই বেতন চালানো যায়। কিন্তু সেই সময়সীমা কার্যত পেরিয়ে যাওয়ায় সমস্যাটা জটিল হয়ে উঠেছে। নাজিরুদ্দিন সরকার বলেন, ‘আগের বিডিওর গত দু’মাসের বেতন এই ব্লক থেকেই হয়েছে। চলতি মাস শেষ হলে এরপর কী করতে হবে, সেই নির্দেশনা জানতে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। জেলা থেকে যেটা জানানো হবে, আমরা সেটাই মানব।’ জেলাশাসক ইউনিস রিশিন ইসমাইলও জানিয়েছেন, ব্লক প্রশাসনের চিঠি রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।


এখন প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কোথায় গেলেন বিডিও সৌমেন বণিক? এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, দুর্গাপুজোর পর থেকেই নন্দীগ্রাম-১ বিডিও সৌমেন বণিকের কোনও হদিশ নেই। প্রথমে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে সাত দিনের ছুটি নেন তিনি। সেই মেয়াদ শেষে ফের ৩০ দিনের ছুটির আবেদন করেন। এরপর ১৫ অক্টোবর রাজ্যের নির্দেশে পিনাকী দেবনাথকে নন্দীগ্রাম-১ বিডিও করা হলেও দু’দিনের মধ্যে তাঁকে বদলি করে পাঠানো হয় কালিম্পংয়ে। পরে নাজিরুদ্দিন সরকার এই ব্লকের বিডিও ও ডিডিও হিসেবে দুই দায়িত্বই সামলাচ্ছেন।

এদিকে রাজ্য প্রশাসনে এত বদলির মধ্যেও, কোনও সরকারি তালিকায় নেই সৌমেন বণিকের নাম। না বদলি, না ছুটি মঞ্জুর, না অন্যত্র যোগদানের উল্লেখ। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তিনি কি সত্যিই বেপাত্তা? না কি শুধু প্রশাসনিক নথিতে ‘আছেন’ বলেই বেতন সংক্রান্ত জটের সৃষ্টি হয়েছে?

ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘বাস্তবে সৌমেনদা অফিসে নেই, কোথাও যোগও দেননি। কিন্তু তিনি চাকরি ছাড়েননি। তাই কাগজে-কলমে তিনি এখনও এই ব্লকের আধিকারিক। এই কারণেই এমন অস্বস্তিকর অবস্থা।’

বর্তমানে নভেম্বর শেষের মুখে। অক্টোবরে সৌমেন বণিকের বেতন নন্দীগ্রাম-১ ব্লক থেকেই গিয়েছে। এবার প্রশ্ন, এই মাসেও কি একইভাবে দু’জনের বেতন দিতে হবে? নাকি রাজ্য দপ্তর থেকে নতুন নির্দেশ আসবে? সেই উত্তরের অপেক্ষায় এখন তাকিয়ে ব্লক প্রশাসন।