কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র- ছাত্রী, গবেষক ও শিক্ষক মিলে ২৫ জনের একটি দল সফলভাবে ১৯ থেকে ২৫ মে ২০২৫ পর্যন্ত অসম ও মেঘালয় রাজ্যে এক সপ্তাহব্যাপী ‘ক্ষেত্রসমীক্ষা ও কর্মশালা’ আয়োজন করে। এই ক্ষেত্রসমীক্ষা আয়োজিত হয় স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের নিয়ে, গবেষক অধ্যাপক সুজয়কুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে। এর পাশাপাশি, লোকসংস্কৃতি পর্যটন ও সমষ্টি উন্নয়ন বিষয়ে বিভাগের ছয় মাসব্যাপী সার্টিফিকেট কোর্সের শিক্ষার্থীরাও এই সমীক্ষাকার্যে অংশগ্রহণ করে।
ক্ষেত্রসমীক্ষার সামগ্রিক কার্যধারা তিনটি বিশেষায়িত দলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, প্রত্যেকটি দল লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি বিষয়কেন্দ্রিক পৃথক এক একটি দিক নিয়ে কাজ করে। প্রথম দল অসম ও মেঘালয়ের নির্ধারিত গন্তব্যে আদিবাসী সংস্কৃতি ও নানান লৌকিক ঐতিহ্য বিষয়ে সমীক্ষা করে। দ্বিতীয় দল দুই রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলোর উপর লোকসংস্কৃতির সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধান চলে। তৃতীয় দল পর্যটনস্থলে পর্যটকদের সঙ্গে সরাসরি মাঠপর্যায়ের কাজ করে, যেখানে পর্যটনের ধারা, সন্তুষ্টির মাত্রা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের মিথস্ক্রিয়া নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
অসমের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমীক্ষা স্থানগুলোর মধ্যে ছিল – কামাখ্যা মন্দির, রাভা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রাম ঝিমরি গাঁও, জাদুবিদ্যা ও লৌকিকচিকিৎসা ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত গ্রাম মায়ং, এবং পোবিতোরা অভয়ারণ্য। মেঘালয়ে দলগুলি পরিদর্শন করে ডাউকি অঞ্চল, এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম গ্রাম মাওলিনং। এই গ্রামের আরেকটি বিশেষত্ব হল এখানে রুট ব্রিজ বা জীবন্ত শিকড়ের সেতু রয়েছে, যা পর্যটকদের ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। এছাড়া শিলং শহরে অবস্থিত লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসীর সংস্কৃতি বিষয়ক সংগ্রহশালা হিসেবে ডন বস্কো মিউজিয়াম পড়ুয়া ও গবেষকরা পরিদর্শন করেন।
২২ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃসাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এই ফিল্ডওয়ার্কের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল, যেখানে অসমের কামরূপ জেলার পূব কামরূপ কলেজ এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগের গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়। পূব কামরূপ কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশন করে বিহু ও সত্রিয়া নৃত্য সহ বিভিন্ন লোকনৃত্য ও লোকসঙ্গীত।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও উপস্থাপিত হয় বাংলা লোকসঙ্গীত ও লোকনৃত্য, যা অনুষ্ঠানটিকে এক প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অভিসন্দর্ভে রূপ দেয়। এছাড়াও, মায়ং অঞ্চলের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় ঐতিহ্যবাহী বিহু নৃত্য প্রত্যক্ষ করার বিরল সুযোগ পেয়েছিল সমীক্ষার দলটি। এর ফলে ওই অঞ্চলের সংস্কৃতির সঙ্গে সমীক্ষকদের সম্পৃক্ততাকে আরও গভীর করে তোলে।
অংশগ্রহণকারীরা এই ক্ষেত্রসমীক্ষার অভিজ্ঞতাকে এক গভীর ও সমৃদ্ধ অভিজ্ঞান হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা উত্তর-পূর্ব ভারতের আদিবাসী সমাজের লোকঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং সামাজিক গতিবিধি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে।
ক্ষেত্রসমীক্ষা ও কর্মশালার সমন্বয়কারী অধ্যাপক সুজয়কুমার মণ্ডল বলেন, ‘এবার আমরা সচেতনভাবে পশ্চিমবঙ্গের বাইরের অঞ্চলকে বেছে নিয়েছি, মূলত অসম ও মেঘালয়ের লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতির উপর গুরুত্ব দিয়েছি। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট পর্যটনের গন্তব্যস্থলে লোকসংস্কৃতি, পর্যটন ও সমষ্টি উন্নয়ন বিষয়কে সামনে রেখে সমীক্ষাকার্য পরিচালনা করা হয়েছে, যা আমাদের পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক পূর্বতন ক্ষেত্রসমীক্ষা থেকে এইবারের অভিজ্ঞতাকে এক বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।’