ভৌগোলিক দিক থেকে বীরভূম জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা যেমন ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানার সঙ্গে যুক্ত তেমনই, প্রতিবেশী মুর্শিদাবাদ জেলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বীরভূম জেলার নলহাটি, মুরারই, পাইকর থানা এলাকার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে মুর্শিদাবাদের সূতি, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘি, জঙ্গিপুর থানা এলাকা। মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম ও বড়ঞা থানা এলাকার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে এজেলার তারাপীঠ, মাড়গ্রাম, মল্লারপুর, ময়ূরেশ্বর, লাভপুর, কীর্ণাহার, নানুর থানা এলাকা। শনিবার ১২ এপ্রিল মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জ, সূতি ও ধুলিয়ানে ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী যে তাণ্ডব শুরু হয় তার রেশ বীরভূম জেলারও কিছু অংশে দেখা দিলেও, জেলা পুলিশ প্রশাসনের সতর্কতায় কোথাও তেমন কোনও বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। শনিবার ১২ এপ্রিল মুর্শিদাবাদেরন জাফরাবাদ এলাকায় দুষ্কৃতীদের হাতে হরগোবিন্দ দাস এবং তার ছেলে চন্দন দাসকে বাড়ি থেকে বের করে কুপিয়ে খুনের পরে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো ছাড়াও লুটপাট চালানো হয়।
তারপরই কলকাতা হাইকোর্টে নির্দেশে নামানো হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। টহল বাড়ানো হয় রাজ্য পুলিশেরও। চলে রুটমার্চ। শুরু হয় দুষ্কৃতীদের ধরপাকড়। তখনই পুলিশ আশঙ্কা করেছিলো যে, মুর্শিদাবাদে যে সব দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশে ও বীরভূম জেলায় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেবে। এরপরই বীরভূম জেলা পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় রুটমার্চ ছাড়াও নাকা চেকিং শুরু করে। খতিয়ে দেখা হতে থাকে বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি। যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিলো না, অথচ প্রয়োজন রয়েছে, সেইসব জায়গায় নতুন করে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। তারাপীঠ এলাকা স্পর্শকাতর এবং এখানে দুষ্কৃতীরা এসে আশ্রয় নিতে পারে মনে করে ব্রাহ্মণডিহি সীমানা এলাকায় চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়। মুর্শিদাবাদের সঙ্গে সংযোগকারী জাতীয় সড়ক ধরে আসা প্রতিটি গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তারপর জেলায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
মুর্শিদাবাদে অশান্তির অন্যতম দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতে পুলিশ সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি দেখে জাফরাবাদের পার্শ্ববর্তী জিগরি এলাকার বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করে। এদের মধ্যেই ছিলো দুই ভাই কালু নাদাব এবং দিলদার নাদাব। পুলিশ জানতে পারে যে, এই দুই ভাই সূতি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালাবার চেষ্টা করছে। সেই সূত্রেই পুলিশ সূতি সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়ে, সেখানকার সীমান্ত এলাকা থেকেই দিলদার নাদাবকে পাকড়াও করতে পারলেও তার ভাই কালু নাদাবের সন্ধান পায়নি। পুলিশ জানতে পারে যে, দিলদার বাংলাদেশ সীমান্তে পুলিশের হাতে ধরা পড়তেই কালু বাংলাদেশে পালাবার পরিবর্তে বীরভূমের মুরারই এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়েছে। এরপরই বীরভূম জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কালু নাদাবকে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ মুরারই থেকে গ্রেপ্তার করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যায়। ধৃত দুই ভাইকেই মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে তুলে মুর্শিদাবাদ পুলিশ তাদের নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হামলার মূল চক্র এবং এর পিছনে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনও যোগ আছে কী না এবং থাকলে কী ধরনের যোগ রয়েছে, তা স্পষ্ট হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।