শতবর্ষে কবি সুকান্ত স্মরণে পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্য সংসদ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্য সংসদের পক্ষ থেকে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মশতবর্ষ উদযাপিত হল গত ২৩ নভেম্বর, রবিবার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির আসন অলংকৃত করেন যথাক্রমে সাহিত্যিক দেবনারায়ণ দাস এবং সাহিত্যিক সরোজ ভট্টাচার্য। প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ শান্তি গের তার সংক্ষিপ্ত ভাষণে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অবদানের কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঔপন্যাসিক পাহাড়ি খান বলেন বাংলা ভাষা ও ভাষাসৈনিকদের সম্মান প্রদানের জন্য বাংলায় পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্য সংসদের অবদান অনস্বীকার্য।

বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের চৌদ্দজন গুণী ব্যক্তিকে ‘বাংলার গৌরব অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ সম্মান প্রদান করেন পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্য সংসদের সম্পাদক ডাঃ রুহুল আমিন। সম্মান প্রাপকদের মধ্যে ছিলেন সাহিত্যিক সরোজ ভট্টাচার্য, কবি শশীবালা বর্মন অধিকারী, সাহিত্যিক পাহাড়ি খান, কবি অজয় আচার্য, কবি সৌরেন নন্দ, কবি হাশমাৎ আলি, ডাঃ শান্তি গের, ডাঃ উজ্জ্বল মুন্সি, কবি নারায়ণ চন্দ্র দে, কবি দেবনারায়ণ দাস,কবি ডাঃ নুরুল ইসলাম মোল্লা, কবি ইউসুফ মোল্লা, কবি ভোলানাথ হালদার প্রমুখ।

তাপসী প্রামানিকের কন্ঠে উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় এবং প্রায় ৬০ জন বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিককে ‘কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে কবি সুকান্ত বিষয়ক স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন রাহুল পাত্র, আসগার আলি মন্ডল, মধুসূদন জানা, আলাউদ্দিন লস্কর, এস এম শামসুল ইসলাম, বলরাম হালদার, পলাশ হালদার, কাজী আজাদ, নায়েব আলি গায়েন, ফুলকুমার বেরা, আরাধনা ভট্টাচার্য, অনির্বাণ চ্যাটার্জী, জুলেখা নাসরিন, নন্দগোপাল মণ্ডল, আবুল বাসার হালদার, ত্রিগুণা রঞ্জন বারিক, আশীষ মণ্ডল, রাজু কর্মকার, জাবিবুর পাইক, সুভাষচন্দ্র ঘোষ, অজিত কুমার জানা, সুমা আইচ হাজরা, রমজান আলী, সুভাষ চন্দ্র ঘোষ, রাফিয়া সুলতানা, সুকুমার খাঁ, দ্বারকানাথ দাস, তপন নস্কর, অশোক কুমার পাল, দেবব্রত মাইতি, চায়না খাতুন, ওয়াকিব মন্ডল, সোমা পাল, শাহার উল ইসলাম, সুমিতা চৌধুরী, মনোরঞ্জন হালদার, মনোজ বিশ্বাস, নীতীশ রঞ্জন দাস, অলিউল্লাহ সেখ, রুবিনা হক, শ্রীবাস মণ্ডল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সাহিত্য দর্পণ প্রকাশনীর ডাঃ রুহুল আমিন সম্পাদিত ‘আমার স্বপ্ন’, কবি নারায়ণ চন্দ্র দে-র ‘বাস্তবিক’ ও ‘অনুশ্রী’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থ এবং কবি সৌরেন নন্দের ‘শেষ ভিক্ষা’ কাব্যগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচিত করা হয়। শেষে সভাপতির বক্তব্য এবং সমাপ্তি সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।


‘গোয়ালজান প্রবীণ মঞ্চ’র রজতজয়ন্তী বর্ষ উৎসব
কয়েকজন প্রবীণ মানুষের উৎসাহ এবং উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ২৫ বছর আগে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থানার গোয়ালজান গ্রামে গড়ে উঠেছিল ‘গোয়ালজান প্রবীণ মঞ্চ’। সম্প্রতি তিনদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই সংস্থার রজতজয়ন্তী বর্ষ উদযাপন উৎসব হয়ে গেল। প্রথমদিন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রায় পঞ্চাশজন প্রবীণ এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। পদযাত্রায় অংশ নেন প্রবীণ মঞ্চ ফোরাম-এর রাজ্য সম্পাদক বাবলা ঘোষ। পরবর্তী দু’দিন এলাকার খুদেদের নিয়ে অঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘সেন্টজন এ্যাম্বুলেন্স’ এর পক্ষ থেকে ছোটো প্রতিযোগীদের হাতে অঙ্কন সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। আরও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী খুদে প্রতিযোগীদের জন্য মিষ্টির প্যাকেটের ব্যবস্থা করা হয়। তিনদিনের অনুষ্ঠানগুলিতে উপস্থিত ছিলেন ‘সেন্টজন্স এ্যাম্বুলেন্স’ এর সম্পাদক অনুত্তম রায়, ‘গোয়ালজান প্রবীণ মঞ্চ’ এর সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী, সভাপতি পরিমল সরকার, সংস্থা পরিচালিত পত্রিকা ‘গোধূলিবেলা’র সম্পাদক শশাঙ্কশেখর সরকার, তবলাবাদক চন্দ্রশেখর সমাজদ্বার প্রমুখ। উপস্থিত অতিথিরা সময়োপযোগী, প্রাসঙ্গিক এবং তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্য রাখেন। সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক ফণীন্দ্র ভট্টাচার্য একজন বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিকে ক্র্যাচ দিয়ে সহায়তা করেন। অনুষ্ঠান থেকে প্রবীণদের সমস্যা ও তাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক ˘
ও সরকারকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

বাপি লাহিড়ীর জন্মদিন উদযাপন
বাপি লাহিড়ীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল ‘কভি আলভিদা না কহনা’, আয়োজনে দ্যা ড্রিমার্স ও হৈমন্তীর কন্ঠে। গানে ছিলেন হৈমন্তী রায়, গানের গল্পে ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। কলকাতার উইশডম ট্রি-তে। বাপি লাহিড়ী এর মেলোডিয়াস কম্পোজিশন নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল এদিনের স্মরণ সন্ধ্যা।
বাপি লাহিড়ীর ডিস্কো রিদিমের বাইরেও আছে অজস্র শ্রুতিমধুর গান যা তাঁর বহুমুখী সুরকার হওয়ার নিদর্শন। মূলত ডিস্কো কিং বলা হলেও, মেলোডি মেকার হিসেবেও বাপি লাহিড়ীর অজস্র গান চিরকালীন হয়ে গেছে। এদিনের হৈমন্তী রায়ের চয়নের মধ্যে ছিল তেমনই বেশ কিছু গান যেমন – বলছি তোমায় কানে কানে, আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো, মঙ্গল দীপ জ্বেলে, প্রেম কিসে হয় তা, মানা হো তুম, ইয়ে ন্যায়না ইয়ে কাজল, প্যায়ার মাঙ্গা হ্যায় তুমহিসে এমনই আরো অনেক গান। সতীনাথ মুখোপাধ্যায় এর অসাধারণ তথ্য নির্ভর আলোকপাত সুরকারের কর্মজীবন ও ব্যাক্তি জীবনের নানা দিক তুলে ধরে।

দুই বন্ধুর গল্প
কিংবদন্তি সঙ্গীত পরিচালক সলিল চৌধুরী ও চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জন্ম শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল ‘দুই বন্ধুর গল্প’ অনুষ্ঠান, উইশডম ট্রি-তে। সমগ্র অনুষ্ঠানের ভাবনা, পরিচালনায় ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র। ঋত্বিক ও সলিল দুই বন্ধুর একসাথে করা কাজ এমনকি সলিল চৌধুরীর গানের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করলেন দেবজ্যোতি মিশ্র। গান করলেন অরিত্র দাশগুপ্ত, পরাগ বরণ পাল, সোনাক্ষী কর, তিতাস চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ দেব রায়। ও আলোর পথযাত্রী, আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম, প্রান্তরের গান আমার, আমি অনেক ঘুইরা শ্যাষে আইলাম রে কইলকাত্তা, এবার আমি আমার থেকে এমনই আরো কালজয়ী গানে ভরে উঠল ‘দুই বন্ধুর গল্প’।

ছন্দনীড়-এর নাট্য উৎসব

নববারাকপুর ছন্দনীড় এর দুদিন ব্যাপী ২১ তম নাট্যউৎসব হয়ে গেল নববারাকপুর কৃষ্টি মঞ্চে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে উৎসবের সূচনা করেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ অসিত চৌধুরি। উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল চন্দন সেনের নাটক দায়বদ্ধ। দায়বদ্ধ নাটকটি নির্দেশক কমল দত্ত পরিচালনায় দর্শকদের কাছে প্রশংসা পায়। নাটকে গগন চরিত্রে কমল দত্তর বলিষ্ঠ অভিনয় মনে রাখার মতো। এছাড়া সীতার চরিত্রে সুতপা সরকার এবং ঝিনুকের চরিত্রে সুকন্যা দাশগুপ্তর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে। এ বাদে নাটকে অংশ নেন উমাশঙ্কর ঘোষাল, শ্যামল দত্ত ও বিপ্লব দত্ত। কৌশিক সজ্জন এর আবহ এবং মনোজ প্রসাদের আলো নাটকটির বিশেষভাবে নজর কাড়ে। ছন্দনীড়ের পরিচালনায় অনুনাটক উৎসবে আটটি দল অংশ নেয়। উদ্বোধন করেন নাট্য ব্যক্তিত্ব মানিকলাল মিত্র ও অপূর্ব দে।

ধ্রুপদী নৃত্যোৎসব
গত ৯ই নভেম্বর ২০২৫, রবিবার, জ্ঞান মঞ্চে আয়োজিত হলো নৃত্য ধ্রুপদী মিউজিক এন্ড ডান্স রিসার্চ সেন্টার এর ধ্রুপদী নৃত্যোৎসব। ধ্রুপদী নৃত্যোৎসব এবছর চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করলো। পদ্মবিভূষণ পণ্ডিত বিরজু মহারাজ জি এবং কলামন্ডালাম গুরু ভি. আর. ভেঙ্কিট জি-র স্মৃতিতে এবছরের ধ্রুপদী নৃত্যোৎসব আয়োজিত হয়। এই নৃত্যোৎসবে সহোযোগিতা করেন ভারতীয় বিদ্যা ভবন কোলকাতা, ইনফোসিস ব্যাঙ্গালুরু। নৃত্য ও সঙ্গীতের এই ঐতিহ্যকে বজায় রাখতে সাহায্য করেছেন প্রাচীন কলা কেন্দ্র। এছাড়াও সহোযোগিতা করেছেন বিথিকাস্ ফ্যাশন বুটিক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৃত্য জগতের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও এবারের অনুষ্ঠানের বিশেষ চমক ছিল মমতা মহারাজ জি-র একক কথক নৃত্য পরিবেশনা।

পরমব্রত আইপিএস পাপিয়া
সম্প্রতি কলকাতা প্রেসক্লাবে বহরমপুরের বাবুলবোনা রোড থেকে রাজীব ঘোষ সুবীর ঘোষ সম্পাদিত জন্মদিন সাহিত্য পত্রিকার ২৬ তম বর্ষের বার্ষিক সম্মাননা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান হয়ে গেল গুণীজনদের উপস্থিতিতে। এই অনুষ্ঠানে পেশায় নিষ্ঠা ও সততার জন্য পরম-ব্রতী আইপিএস পাপিয়া সুলতানাকে দেওয়া হয় পরমব্রত সম্মান। বেলা ভট্টাচার্যের নামাঙ্কিত শিক্ষাব্রতী পুরস্কার গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক সহযাত্রী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জঙ্গিপুরের শিক্ষা সংস্কৃতির বিস্তারক শেখ মোহাম্মদ ফুরকান। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্যা আশা খাতুন বিবিকে প্রদান করা হয় সম্প্রীতি সম্মান। শিকড় সন্ধানী সম্মাননা গ্রহণ করেন মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের উদ্যোগপতি রুদ্রকান্ত ধর। সমাজ সেবায় ধারাবাহিক অবদানের জন্য জীবন কৃতি সম্মান প্রদান করা হয় বেলডাঙ্গা ভাগীরথী সেবা সদন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার মো: সাইদুজ্জামানকে।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সম্মানিত ব্যক্তিবর্গছাড়াও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভীক মজুমদার ,বেলা ভট্টাচার্যের পুত্র ঋতব্রত ভট্টাচার্য প্রমূখ। আইপিএস পাপিয়া সুলতানা বলেন সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার সেই লড়াইয়ের কথা, অন্তঃপুর থেকে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব নেওয়া সেই লড়াই এর রূপরেখাও। তিনি আরো জানান এক প্রশ্নের উত্তরে স্প্যানিশ ভাষায় কবিতা চর্চার কথাও। অধ্যাপক অভীক মজুমদার বলেন সাহিত্য হোক অথবা সংস্কৃতি অথবা রাজনীতি সব কিছুরই লক্ষ্য সমাজের কল্যাণ করা, মানবসম্পদ বিকাশ ঘটানো। জন্মদিন সাহিত্য পত্রিকা সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি প্রত্যেক বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষদের যেভাবে সম্মানিত করে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় । এদিন বিশেষভাবে সংবর্ধিত করা হয় মুর্শিদাবাদের আর এক ভূমিপুত্র শিক্ষা বিস্তারক কাজী মহসিন আজিমকে।