‘পূরবাঈ’-র পঞ্চকবি শ্রদ্ধার্ঘ্য

নিজস্ব চিত্র

‘পূরবাঈ সংস্কৃতিকলা বিকাশ কেন্দ্র’ উচ্চাঙ্গ নৃত্যজগতে এক সুপরিচিত নাম। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার প্রখ্যাত ওড়িশি ও কথক নৃত্যশিল্পী এবং গুরু নন্দিনী চৌধুরী মোহান্তি কথক, ওড়িশি ও ভরতনাট্যম নৃত্যপ্রতিষ্ঠানগুলির অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নবপ্রতিভাদের উৎসাহ দান করে থাকেন। বিখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে তিনি প্রেরণা দেন নতুন প্রজন্মকে। রবীন্দ্রনাথ ঠকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন ও রজনীকান্ত সেন— এই পঞ্চকবিকে নিয়ে এমনই একটি অনুষ্ঠান হয়ে গেল সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে (আই.সি.সি.আর/৩১শে অক্টোবর)। এদিন প্রতিটি নৃত্যবিন্যাস ছিল কথক, ভরতনাট্যম, মণিপুরী ও গৌড়ীয় নৃত্যশৈলীতে। প্রারম্ভে প্রান্তিকা মুখার্জীর কোরিওগ্রাফিতে রবীন্দ্রনাথের ‘সুন্দরী রাধে’ সুন্দরভাবে উপস্থাপিত। শতাব্দী আচার্য ও শিষ্যদের ‘নৃত্যের তালে তালে’ (রবীন্দ্রনাথ) নৃত্যাংশের পর শর্মিলা মুখার্জীর আন্তরিক প্রচেষ্টা ‘খেলিছ এ বিশ্বলয়ে’ (নজরুল), ছন্দরল্লরীর নজরুল প্রণাম ‘মহাকালের কোলে’ ও রবীন্দ্র শ্রদ্ধা ‘প্রচণ্ড গর্জনে’ যথাযথ। রবীন্দ্রসঙ্গীতে কুশল ভট্টাচার্যের ‘রাত্রি এসে’, প্রত্যূষা নস্করের ‘ফাগুন হাওয়ায়’, আরাধ্যা গোস্বামীর ‘বিশ্ববীণা রবে’, ‘শাওন গগনে’, সৃজন নৃত্যগোষ্ঠীর ‘হৃদয় মন্দ্রিত’ ছিল আন্তরিক। নজরুল শ্রদ্ধায় তাপস দেবনাথের (‘আলগা কর গো’), ‘প্রয়াস’-এর ‘পরদেশী মেঘ’, ‘নৃত্যশৈলী’-র ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, নীহারিকা সেন্টারের ‘সৃজন ছন্দে’ উল্লেখযোগ্য।

‘সৃজন ছন্দে’ গানটিতে চমৎকার মুদ্রাভঙ্গি ও সমলয়নে নৃত্য পরিবেশনায় রূপ পায় গৌড়ীয় নৃত্য। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘একি মধুর’ ও ‘আজি নূতন রতনে’ গানদুটির নৃত্যরূপের পর মণিপুরী শৈলীতে ‘আধার অম্বরে’ (কবিগুরু) নৃত্যরূপ অন্য স্বাদ আনে। প্রতিষ্ঠিত ওড়িশি নৃত্য শিল্পী রাজীব ভট্টাচার্য ও তাঁর সম্প্রদায়ের নৃত্যাংশ কাজী নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, ‘হে পার্থসারথি’ এবং ‘মহাবিদ্যা আদ্যা শক্তি’ সঠিক কোরিওগ্রাফিতে সুপরিবেশিত। নীহারিকা সেন্টারের পরিবেশনা ছিল বিভিন্ন বোলের সঙ্গে ‘সৃজন ছন্দে’ গানটির গদ্যরূপে মুদ্রাভঙ্গিমা।

প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নন্দিনী চৌধুরী মোহান্তির শিষ্যদের রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-দ্বিজেন্দ্রলালের ‘মন মোর’, ‘হিমের রাতের’, ‘ব্রজগোপী খেলে’, ‘সখী ঐ বুঝি’, ‘আজো মধুর বাঁশরী’, ‘কে আমার বাজায়’, ‘আমরা মলয় বাতাসে’ গানগুলির সম্মিলিত নৃত্যাংশগুলি ছিল আন্তরিক ও সুবিন্যস্ত। ইলিয়া দাস মুখার্জীর ‘আনন্দধ্বনি জাগাও’, ‘নৃত্য উপাসনা’ গোষ্ঠীর রবীন্দ্র-নজরুল নৃত্য ‘সব দিবি কে’, ‘দখিণ সমীরণ’ ‘মল্লার নৃত্য’ প্রশিক্ষণ’-এর ‘মহারাজ এ সাজে’ (রবীন্দ্রনাথ) আন্তরিক প্রচেষ্টা। অনুষ্ঠানের শেষ হয় রজনীকান্তের গান ‘স্বপনে তাহারে’ গানটির সঙ্গে নন্দিনীর সুচারু নৃত্যে। অভিব্যক্তি ও নমনীয় মুদ্রাভঙ্গিতে নৃত্যাংশ ছিল লালিত্যময়।


অনুষ্ঠানের প্রথমে শ্রদ্ধার্পণ করা হয় প্রয়াত নৃত্যশিল্পী কলামণ্ডলম ভেঙ্কিট ও বিধ্যেন্দু ঘোষকে। প্রতিষ্ঠান আয়োজিত প্রতিযোগিতায় স্থানাধিকারী শিল্পীরা পেলেন পুরষ্কার ও শংসাপত্র। প্রতিষ্ঠান থেকে সন্মাননা প্রাপ্ত নানান ক্ষেত্রের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন অলকা কানুনগো, মহুয়া মুখোপাধ্যায়, প্রবীণ পণ্ডিত ভোলাপ্রসাদ সিং, প্রশান্ত অরোরা, অনুরাধা সান্যাল, রত্নজিৎ চৌধুরী ও তরুণ বোস।