ভারতীয় মার্গ সঙ্গীত ক্ষেত্রে সুপ্রসিদ্ধ, চিরস্মরণীয় কিছু শিল্পীদের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে একটি অনুষ্ঠান হয়ে গেল ক্যালকাটা ক্লাবে (২১শে নভেম্বর)। শিল্পী ছিলেন এ কানন, সাগিরুদ্দীন ও ডালিয়া রাহুতের কাছে তালিমপ্রাপ্ত সোহিণী রায় চৌধুরী। শ্রদ্ধেয় উচ্চাঙ্গ শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন- গিরিজা দেবী , শোভা গুর্তু, রোশন আরা বেগম, নির্মলা দেবী, বেগম আখতার, আশা ভোঁশলে, গওহর জান, নুরজাহান, সিদ্ধেশ্বরী দেবী, ফরিদা খানুম। সঙ্গীতের প্রেক্ষাপটে কিছু গানের সঙ্গে পরিবেশিত হয়েছে গানের ভাব ও কথার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কথক নৃত্য। নৃত্যাংশে ছিলেন কথক শিল্পী মধুমিতা রায়ের তিন শিষ্য— দেবারতি ব্যানার্জী, প্রসেনজিৎ মজুমদার, শ্রীয়াঙ্কা মালি। সোহিণী অনুষ্ঠান শুরু করেন রোশন আরা বেগমের (১৯১৭ -১৯৮২) বিখ্যাত মিয়ামল্লার ত্রিতাল বন্দীশ ‘বরসন লাগি’ দিয়ে। নিজের পরিসীমার মধ্যে শিল্পীর প্রয়াস ছিল তান, সরগমের। বেনারস ঘরানার পদ্মশ্রী সিদ্ধেশ্বরী দেবীর (১৯০৮- ১৯৭৭) মিশ্র গৌরী -ভৈরব রাগে একটি বিখ্যাত আবেগ পূর্ণ দাদরা ‘দিওয়ানা কিয়ে শ্যাম’।
সোহিণীর প্রচেষ্টা ছিল সেটি প্রাণবন্ত করে তোলার। বেনারস ঘরানার ‘ঠুম্রি কুইন্’ পদ্মবিভূষণ গিরিজা দেবী (১৯২৯- ২০১৭) বিখ্যাত তাঁর ‘পূরব অঙ্গ’ গায়কীর জন্য। তাঁর ঠুম্রি ও টপ্পা’ মদকে ভরে তোরে নৈন’ এবং ‘ ও মিঞা বেজানওয়ালে’ (শোরী মিঞা) গাইলেন শিল্পী। সুর লাগানো এবং টপ্পার দানা কাজ আরও সঠিক কাঙ্খিত ছিল। বিগত যুগের অত্যন্ত প্রতিভাময়ী ও বহুল আলোচিত কন্ঠ ও নৃত্য শিল্পী এবং ভারতের প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ডশিল্পী গওহর জানের (১৮৭৩- ১৯৩০) ঠুম্রি (আনবান জিয়া মে) ও দাদরায় (নথ বেসর বালম) সোহিণী চেষ্টা করেছেন সঠিক ভাবটি ফুটিয়ে তুলতে। কিংবদন্তীর শিল্পী আশা ভোঁশলের গজল ‘নিয়তে শৌখ ভর না যায়ে’ গানটির মোচড়ের সঙ্গে ছোট কাজগুলি সাবলীলতার সঙ্গে নিপুণভাবে করা খুবই কঠিন। সোহিণী চেষ্টা করেছেন নিজের সীমানার মধ্যে। এরপর পাতিয়ালা ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী ও অভিনেত্রী নির্মলা দেবীর (১৯২৭- ১৯৯৬) ‘ম্যায়নে লাখো কে বোল সহে’ গানটিতে স্বকীয়তা দেখিয়েছেন সোহিণী।
‘মালিকা এ গজল’ আখতারি বাঈ ফৈজাবাদি ওরফে বেগম আখতারের (১৯১৪-১৯৭৪) ‘জোছনা করেছে আড়ি’ গানটি ছিল ঠহরান ও গায়নশৈলীতে যথাযথ। পদ্মভূষণ শোভা গুর্তুর (১৯২৫- ২০০৪) ‘রঙ্গি সারি গুলাবী’ দাদরাটির পর সোহিণী গাইলেন সেযুগের বিখ্যাত গায়িকা— অভিনেত্রী পাকিস্তানের ‘মালিকা এ তরান্নুম’ নুরজাহানের (১৯২৬ – ২০০০) সিন্ধ্রী সুফি তরানা এবং ‘দমাদম মস্ত কলন্দর’। শেষ পরিবেশন আরেক প্রসিদ্ধ পাকিস্তানি শিল্পী’ মালিকা এ গজল’ ফরিদা খানুমের (জন্ম ১৯২৯) জনপ্রিয় গজল ‘আজ যাবে কি জিদ না করো’ । কিছু গানে যথার্থ নৃত্য গানের অনুষ্ঠানকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। সহযোগী যন্ত্র শিল্পীদের মধ্যে বিশিষ্ট তবলা শিল্পী সাবির খানের সুপুত্র আশিস খান এবং হারমোনিয়মে বর্তমানের প্রতিভা দেবাশিস অধিকারী দেখিয়েছেন বাদনকৌশলে তাঁদের যোগ্যতা। গ্রন্থনায় নিজের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছেন স্বনামধন্য অভিনেতা প্রদীপ মিত্র।