পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পূজার আবহে এক অভিনব পরিবেশবান্ধব ভাবনার উদ্যোগ নিল জাতীয় পাট পর্ষদ (এনজেবি)। কেন্দ্রীয় বস্ত্র দপ্তরের অধীন এই সংস্থা এবার ‘পরিবেশবান্ধব পাট দিয়ে নির্মিত জগদ্ধাত্রী পূজা মণ্ডপ প্রতিযোগিতা’-র আয়োজন করে হুগলি ও নদিয়া জেলার একাধিক পূজা মণ্ডপে। এর মূল উদ্দেশ্য, উৎসবের নান্দনিকতায় পরিবেশ-সচেতনতার বৃদ্ধি করা এবং পাট— এই প্রাকৃতিক, জৈব-বিয়োজ্য ও টেকসই তন্তুর ব্যবহারকে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা।
এনজেবি–র সচিব ও সিইও শশী ভূষণ সিং (আইআরটিএস)–এর নেতৃত্বে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি পুজো কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কমপক্ষে ২০০ মিটার জুট ফ্যাব্রিক, ২৫ কিলোগ্রাম জুট ইয়ার্ন এবং ২৫ কিলোগ্রাম কাঁচা জুট অথবা সমপরিমাণ সংমিশ্রণ ব্যবহারের। এই বিশেষ শর্তের মধ্য দিয়েই সৃজনশীলতা, শৈল্পিকতা এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্ববোধের উন্মেষ ঘটাতে বলা হয়েছিল।
হুগলি জেলার চন্দননগর, রিষড়া ও নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন পুজো কমিটির মধ্যে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এনজেবি, যাতে উৎসবের আড়ম্বরের সঙ্গে যুক্ত হয় টেকসই ও প্রকৃতি–বান্ধব চিন্তাভাবনা। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পরুচি ও পরিবেশ–সচেতনতার সেতুবন্ধন ঘটানো। প্যান্ডেল সজ্জায় জুট বা পাটের ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়া, জুটের শিল্প–বৈচিত্র্য প্রদর্শন, উৎসবে পরিবেশ–সচেতন অভ্যাস গড়ে তোলা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে জুটপণ্যের প্রচার বাড়ানো।
মূল্যায়নের জন্য এনজেবি–র একটি বিশেষ কমিটি গত ৩০ অক্টোবর ও ২ নভেম্বর তারিখে হুগলি ও নদিয়া জেলার বিভিন্ন অংশগ্রহণকারী প্যান্ডেল পরিদর্শন করে। তারা প্যান্ডেলের নান্দনিকতা, শিল্পকলার উপস্থাপনা, জুট ব্যবহারের পরিমাণ এবং ক্রয়ের প্রমাণপত্র (বিল বা ইনভয়েস) যাচাই করে। সামগ্রিক মূল্যায়নের পর এনজেবি ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, প্রথম স্থানাধিকারী কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগর স্বপ্নের ইচ্ছে পূরণ ক্লাব যুবগোষ্ঠীকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্থানাধিকারী রিষড়ার তেঁতুলতলা রবীন্দ্র সংঘকে ১ লক্ষ টাকা আর্থিক পুরস্কার এবং রিষড়ার হরিসভা যুবগোষ্ঠীকে ২৫ হাজার টাকার সান্ত্বনা পুরস্কার দেওয়া হয়।
এনজেবি জানিয়েছে, এই প্রতিযোগিতা শুধু পুরস্কার নয়, বরং সমাজে পরিবেশবান্ধব উৎসবের চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি অন্যতম প্রচেষ্টা। পাটের মতো প্রাকৃতিক, জৈব–বিয়োজন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য তন্তুর ব্যবহারের মাধ্যমে জগদ্ধাত্রী পুজোর ঐতিহ্যকে আরও সঙ্গত রূপ দেওয়া হয়েছে। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এই প্রচেষ্টা আগামী দিনেও চলবে, যাতে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয় সবুজ সচেতনতা এবং পরিবেশ রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার।