সুদের হার এবারও না কমার ইঙ্গিতই, মত বিশেষজ্ঞদের

দিল্লি, ৪ এপ্রিল— বছরখানেক ধরে আরবিআইয়ের রেপো রেট (যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) ৬.৫ শতাংশে থমকে৷ গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে আর সুদ বাড়ায়নি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ তবে কমায়ওনি৷ ফলে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে চডে় রয়েছে ঋণের সুদও৷ কোথাও কোথাও তা বরং বাড়ছে৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি ঘোষণার আরও একটি মরসুমে পা রেখে তাই চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে দীর্ঘ দিন ধরে নাকাল এবং বিপুল সুদ গুণতে গিয়ে বিপাকে পড়া বহু ঋণগ্রহীতার প্রশ্ন, সুদের এই ভার কমবে কবে? বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে আরবিআইয়ের ঋণনীতি কমিটির বৈঠক৷ শুক্রবার ঘোষণা করা হবে সুদ নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত৷
তবে বিশেষজ্ঞেরা সকলেই প্রায় একমত, যে গত বছরের ন্যায় এবারও সম্ভবত সুদের হার অপরিবর্তিতই রাখতে চলেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক৷ কারণ মূল্যবৃদ্ধির হার এখনও তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী ৪ শতাংশের কাছে নামেনি৷ ঋণনীতি কমিটির ছয় সদস্যের ভোটাভুটিতে কেউ কেউ সুদ ছাঁটাইয়ের পক্ষে থাকতে পারেন৷ তবে বেশির ভাগই হয়তো এখন সেই ঝুঁকি নিতে চাইবেন না৷

মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রার মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের ধারণা, ঋণনীতির অভিমুখ অগস্টের আগে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম৷ কারণ— প্রথমত: ওই সময়েই দেশে বর্ষার গতিবিধি বোঝা যাবে৷ দ্বিতীয়ত: আঁচ পাওয়া যাবে আর্থিক বৃদ্ধির৷ তৃতীয়ত: আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুদ কমাচ্ছে কি না স্পষ্ট হবে৷ অদিতির কথায়, ‘‘আগামী অক্টোবরে সুদের হার কমাতে পারে আরবিআই৷ তবে মাঝের ত্রৈমাসিকগুলিতে আর্থিক বৃদ্ধি আচমকা গতিপথ বদলে কোনও নেতিবাচক চমক না দিলে৷ সে ক্ষেত্রেও সুদ ছাঁটাই সীমিত থাকবে ৫০ বেসিস পয়েন্টের মধ্যে৷’’

অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, ‘গত অর্থবর্ষের (২০২৩-২৪) প্রথম তিনটি ত্রৈমাসিকেই ৮% ছাডি়য়েছে জিডিপি বৃদ্ধির হার৷ এই পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, আর্থিক বৃদ্ধি মোটের উপর ভাল৷ কিন্ত্ত মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাশা অনুযায়ী মাথা নামায়নি৷ উল্টে খাদ্য-সহ কিছু পণ্যে তা এখনও অস্বস্তিজনক৷ ফলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের এখন প্রধান লক্ষ্য হবে, পণ্যের দাম কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া৷ তাই এখনই সুদ কমাবে না তারা৷’


অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী বলছেন, সুদ নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গুরুত্ব দেবে দু’টি বিষয়কে৷ একটি দেশীয় এবং অন্যটি বিদেশি৷ ফেব্রুয়ারিতে দেশে মূল্যবৃদ্ধি ছিল ৫.১%৷ শীর্ষ ব্যাঙ্ক ওই হার আরও নামাতে চাইবে৷ তার উপর যে আর্থিক বৃদ্ধির জন্য সুদ কম থাকা জরুরি, তা এমনিতেই গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে ৮.৪% ছুঁয়েছে৷ ফলে সেই নিরিখে তডি়ঘডি় সুদ কমানোর চাপ কম৷ অন্য দিকে, আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশ সুদ কমানোর পথে হাঁটতে শুরু না করলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আগেভাগে সেই সিদ্ধান্ত নিতে চাইবে না৷