ইউরোপে ভারতীয় ইস্পাতের দাম ১৫–২২ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে হতে পারে

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ইউরোপের বাজারে ইস্পাত রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন করে সঙ্কটে পড়তে চলেছে ভারতীয় সংস্থাগুলি। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্বন নিঃসরণ সংক্রান্ত অতিরিক্ত খরচ কার্যকর হলে ইউরোপে রপ্তানি ধরে রাখতে ভারতীয় ইস্পাতের দাম ১৫ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ। সংস্থাটির সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই অতিরিক্ত খরচের বোঝা সরাসরি রপ্তানিকারকদের বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় সঙ্কট তৈরি করতে পারে।

সংস্থার মতে, ইউরোপীয় বাজারে পরিবেশ সংক্রান্ত কঠোর নীতির ফলে কার্বন নিঃসরণের সঙ্গে যুক্ত খরচ এখন আর এড়ানো যাবে না। ভারতীয় ইস্পাত উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে নতুন নিয়ম চালু হলে প্রতিটি টনের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে অতিরিক্ত ব্যয় চাপবে। সেই ব্যয় সামাল দিতেই ইউরোপে রপ্তানি দ্রব্যের দাম কমানোর পথে হাঁটতে হতে পারে ।

বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, ইউরোপে ভারতীয় ইস্পাত মূলত নির্মাণ, যন্ত্রাংশ এবং পরিকাঠামো খাতে ব্যবহৃত হয়। সেজন্য দাম হঠাৎ বেড়ে গেলে ইউরোপীয় ক্রেতারা বিকল্প দেশ থেকে ইস্পাত কেনার দিকে ঝুঁকতে পারেন। ফলে বাজার ধরে রাখতে লাভের মার্জিন ছাঁটাই করা ছাড়া রপ্তানিকারকদের হাতে সেই অর্থে আর কোনও বিকল্প পথ খোলা থাকবে না।


রপ্তানিকারক মহলের একাংশের বক্তব্য, ‘দাম ১৫ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমানো মানে সরাসরি লাভে কোপ পড়া। ছোট ও মাঝারি সংস্থার পক্ষে এই ধাক্কা সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’ তাঁদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে কার্বন নিঃসরণ কমানোই একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী উপায়।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের রিপোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। রপ্তানিকারকদের সহায়তায় প্রযুক্তি উন্নয়ন, সবুজ শক্তি ব্যবহার এবং উৎপাদন পরিকাঠামো আধুনিক করার জন্য নীতিগত সহায়তা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। তা না হলে ইউরোপের বাজারে ভারতীয় ইস্পাতের অংশীদারিত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সব মিলিয়ে, নতুন বছরের শুরুতেই ইউরোপে কার্বন নিঃসরণ সংক্রান্ত খরচ কার্যকরের জেরে ভারতীয় ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দাম কমিয়ে বাজার ধরে রাখা, না কি উৎপাদন পদ্ধতিতে আমূল বদল— এই দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজতেই এখন ব্যস্ত রপ্তানিকারকরা।