সম্পত্তি বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থের উপর কর কীভাবে বাঁচাবেন

সম্পত্তি বিক্রি করে যদি আপনি লাভের মুখ দেখেন, তাহলে প্রথমেই মাথায় আসে – এই টাকার উপর কর দিতে হবে কি না। অনেকেই ভাবেন, জমি বা বাড়ি বিক্রি মানেই সরকারকে একটা বড় অঙ্কের কর দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে কিছু নিয়ম, ধারা ও পরিকল্পনা জানা থাকলে এই কর থেকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

যখন আপনি কোনও জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করেন, তখন সেই বিক্রির ফলে অর্জিত লাভকে আয়কর আইনে ‘মূলধন লাভ’ বলা হয়। এই লাভ যদি আপনি ২৪ মাসের কম সময়ের মধ্যে অর্জন করেন, অর্থাৎ আপনি যদি ২ বছরের মধ্যে জমি কিনে ফের বিক্রি করে দেন, তবে এই লাভ স্বল্পমেয়াদী মূলধন লাভ হিসেবে গণ্য হবে। এই লাভ আপনার অন্যান্য আয়ের সঙ্গে যোগ হয়ে আয়কর স্ল্যাব অনুযায়ী করযোগ্য হয়ে যাবে।

অন্যদিকে, যদি আপনি জমি বা সম্পত্তি ২৪ মাসের বেশি সময় ধরে নিজের কাছে রেখে বিক্রি করেন, তখন সেই লাভ দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভ হিসাবে গণ্য হবে। এতে করের হার নির্ধারিত ২০ শতাংশ, তবে ইনডেক্সেশন নামক একটি পদ্ধতির মাধ্যমে এই লাভের অঙ্ক কমিয়ে আনা যায়। ইনডেক্সেশন মানে হল – মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী আপনার জমির ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি করে সেই অনুযায়ী লাভের পরিমাণ কম ধরা হয়, যার ফলে আপনাকে কম কর দিতে হয়।


এছাড়াও, আয়কর আইনের ধারা ৫৪বি অনুযায়ী, আপনি যদি কৃষি জমি বিক্রির পর ২ বছরের মধ্যে আবার নতুন একটি কৃষি জমি কিনে নেন, তাহলে সেই লাভের উপর কোনও কর দিতে হবে না। তবে এখানে একটি শর্ত রয়েছে – বিক্রিত জমি অবশ্যই কৃষিকাজে ব্যবহৃত হতে হবে এবং নতুন জমিটিও কৃষিকাজেই ব্যবহার করতে হবে। যদি আপনি দ্রুত নতুন জমি না কিনতে পারেন, তাহলেও চিন্তার কিছু নেই। আয়কর দপ্তরের অনুমোদিত ‘ক্যাপিটাল গেইন ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট স্কিম’-এ সেই লাভের টাকা জমা রাখলে আপনি করের ছাড় পেতে পারেন। পরে ওই টাকা দিয়ে জমি কিনলেই কর মকুব হবে।

অনেক সময় এমন জমিও থাকে যা বিক্রি করলেও কোনও কর দিতে হয় না। যেমন, যদি আপনার জমিটি কোনও পৌর এলাকা বা শহরের সীমার বাইরে হয় এবং সেটি শহরের সীমানা থেকে অন্তত ২ কিলোমিটার দূরে হয়, যেখানে জনসংখ্যা ১০,০০০-এর কম এবং জমিটি মূলত কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে – তাহলে এই জমিকে গ্রামীণ কৃষি জমি বলা হয়। এই ধরনের জমি বিক্রি করলে কোনও মূলধন লাভ কর দিতে হয় না।

তবে কর বাঁচানোর জন্য কাগজপত্র, জমির প্রকৃত ব্যবহার, তার অবস্থান এবং জমি ক্রয়ের ও বিক্রয়ের নির্ভরযোগ্য তথ্য রাখা অত্যন্ত জরুরি। জমি বিক্রির আগেই সঠিকভাবে লাভের হিসাব কষে নেওয়া এবং একজন আয়কর পরামর্শদাতার সাহায্য নেওয়া ভালো। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর সংক্রান্ত আইন পরিবর্তিত হতে পারে এবং সামান্য ভুলের কারণে অনেক বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হতে পারে।

সবশেষে বলা যায়, সম্পত্তি বিক্রি করে যে অর্থ আপনি পাচ্ছেন, তা আপনার বহু বছরের সঞ্চয় বা পরিশ্রমের ফল। তাই সেটিকে কীভাবে আয়কর আইনের মধ্যে থেকেই সুরক্ষিত রাখা যায়, তার জন্য আগে থেকেই সচেতন হওয়া এবং পরিকল্পনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। সঠিক সিদ্ধান্ত আপনাকে শুধু কর বাঁচাতেই সাহায্য করবে না, বরং ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে।