আরএসএস’র ৯০ বছরের প্রোজেক্ট এখন রূপায়নের চেষ্টায় : ঐশী ঘােষ

ঐশী ঘােষ (File Photo: IANS)

বহুদিন বাদে ভারতের যুব সমাজ এক আইকনিক রােল মডেলকে খুঁজে পেয়েছিল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি কানহাইয়া কুমারকে। এরপর সেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের বর্তমান সভাপতি ঐশী ঘােষও যে একই রকম উল্কাগতিতে মূল ধারার রাজনীতিতে উঠে আসছে তার ইঙ্গিত এদিন পাওয়া গেল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পড়ুয়াদের তৈরি করা সমাবেশ মঞ্চে।

এর আগে দুর্গাপুরে নিজের এলাকায় তাঁকে জনসভা করতে দেওয়া হয়। তার আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বৃহস্পতিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐশীর সভা বাতিল করা হয়। কিন্তু পড়ুয়াদের মনােবল ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেই ঐশীকে নিয়ে সভার আয়ােজন করে। সেখানে জনস্রোত উপচে পড়ে। একরত্তি মেয়ের বক্তব্য শুনতে হাজির হয়েছিলেন শহরে স্বনামধন্য সব মানুষ। উপস্থিত ছিলেন তরুণ মজুমদার, অনীক দত্ত থেকে শুরু করে বাম শিবিরের প্রবীণ রাজনীতিক বিমান বােস সূর্যকান্ত মিশ্র প্রমুখ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তাঁকে সভা করতে দেওয়া হয়নি বলে সরব হন ঐশী ঘােষ ।

‘গণতান্ত্রিক রাজ্যে এই কাজ দুঃখজনক’ বলেও মন্তব্য তাঁর। ‘আমাদের আন্দোলন সিএএ এনআরসি’র বিরুদ্ধে। তাতে বাধা দিয়ে আদতে বিজেপি এবং আরএসএস’র সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন ঐশী ঘােষ ।


‘বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটা স্থান যেখানে তর্ক বিতর্কের জায়গা। সেখানে তর্ক বিতর্ক হওয়াটা স্বাভাবিক। আর সেই জায়গায় যখন এই সভাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে গণতান্ত্রিক দেশে সেই মডেল আমরা চাই না’ বলেও এবার জনসভা থেকে এ রাজ্যের প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলে দিল ঐশী ঘােষ।

কোথাও একটা রাজ্য ও কেন্দ্রে যে অশুভ আতাত রয়েছে তা এবার বাংলার মানুষের সামনে নাম না করেই কটাক্ষ করেন দিল্লির ছাত্র পরিষদের নেত্রী ঐশী। আরএসএস আর বিজেপি যেভাবে ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান’-এর কনসেপ্ট নিয়ে চলছে তা বিপজ্জনক। আর যারা এই কনসেপ্ট মানতে চায় না তাদেরকে শাসক গােষ্ঠি বিজেপি ও আরএসএস শেষ করে দিতে চায় বলেও সােচ্চার হন তিনি।

‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান’ মডেল তৈরি আরএসএস’র ৯০ বছর আগের চিন্তাভাবনার ফসল বলে মন্তব্য করেন জেএনইউ’র নিগৃহীতা ছাত্রী ঐশী। কাজী নজরুল ইসলাম আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশে ভেদাভেদের রাজনীতি করছে বিজেপি-আরএসএস। ধর্মের নামে ভাগ করার চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সভা করার কথা থাকলেও অনুমতি মেলেনি। তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঐশী ঘােষ । তবে সব কিছু দূরে সরিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন তিনি। এইভাবে আরএসএস ও বিজেপি’র ঘৃণার রাজনীতির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল একরত্তি মেয়েটি।

কানহাইয়া কুমার যেভাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মূল রাজনীতিতে পা রেখেছিল তেমনই এবার ঐশীকে সামনে রেখে বামপন্থী শিবির আবার আশায় বুক বেঁধে পথে নামলেন। এদিন মিছিলে পা মেলাতে দেখা গেল বামফ্রন্টের বিপুল সংখ্যক প্রবীণ নেতা কর্মী সমর্থকদের। তবে সভা করতে না পারলেও মিছিল করে শ্যামবাজারের দিকে এগিয়ে যেতে পুলিশের ছাড়পত্র মেলে ঐশীদের।

বিপুল জনস্রোতে যােগ দেয় বিভিন্ন কলেজের বহু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্যে কেউ বেহালা কলেজ আবার কেউ মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কলেজের পড়ুয়া। নয়া নাগরিকত্ব বিরােধী নাগরিক মিছিলে যােগ দিয়েছিল বেশ কিছু জেলা কলেজের ছাত্রছাত্রীও। সব মিলিয়ে বামপন্থী শিবির নবীন প্রজন্মের হাত ধরেই নতুন পথের দিশা দেখতে শুরু করেছে। মিছিলে এগিয়ে যেতে যেতেই আজাদির ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। সব মিলিয়ে ছাত্র যুব রাজনীতির সেই পুরনাে সময় ফিরে এসেছে বলে শিহরিত হয়ে ওঠেন প্রবীণ পরিচালকরা।