করোনা সংক্রমণের খোঁজে সরকারের নয়া অ্যাপ ‘সন্ধানে’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

করোনা সংক্রমণের খোঁজে রাজ্য সরকার চালু করতে চাইছে নতুন অ্যাপ ‘সন্ধানে’। রাজ্যে করোনার হটস্পট কোথায় রয়েছে তা খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে এই অ্যাপ। বৃহস্পতিবার নবান্নে ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে এই ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত আশাকর্মীদের কাজের ওপর ভিত্তি করেই এই অ্যাপ চালু করা হল।

প্রসঙ্গত করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের তরফে তৈরি বিশ্ব উপদেষ্টা কমিটির শীর্ষে থাকা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই পরামর্শ দিয়েছিলেন বিভিন্ন অঞ্চলে কার কার জ্বর হয়েছে কিংবা কাশির উপসর্গ রয়েছে, তার একটা র‍্যান্ডম সার্ভে করতে। সেই কাজে আশাকর্মীদের কাজে লাগাতে বলেছিলেন অভিজিৎবাবু। সেই পরামর্শকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য সরকার এই সন্ধানে অ্যাপ চালু করল। আশাকর্মীদের প্রত্যেকের মোবাইলে এই অ্যাপ চালু থাকবে।

বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা বলেন, আজ থেকে এই অ্যাপ চালু করা হল। কোথায় কোথায় হটস্পট রয়েছে কোথায় কোন সমস্যা হয়েছে সেই বিষয়ে তথ্য মিলবে এই অ্যাপের মাধ্যমে। আশাকর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরবেন। তাদের সংগ্রহ করা তথ্য মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি নবান্নের সার্ভারে পৌছে যাবে।


রাজ্যের কোন কোন এলাকায় করোনার উপসর্গ বেশি তা চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে এই অ্যাপ। কারও কোথাও জ্বর হলে অ্যাপের মাধ্যমেই সেই তথ্য চলে আসবে সরকারের কাছে। সেইসব খবর সরকারের কাছে আসার পর প্রয়োজনমতো আইসোলেশনে বা রোগির চিকিৎসা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে বাংলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ফের বাড়ল। বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নে শিল্পসংস্থা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান গত চব্বিশ ঘন্টায় রাজ্যে ১২ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনা আক্রান্ত্রে সংখ্যা ৮৩। রাজ্যে ১১’টি পরিবার থেকে মোট ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

গত চব্বিশ ঘন্টায় করোনা চিকিৎসার পর ছুটি পেয়েছেন ৩ জন। এই মুহূর্তে করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৮০ জন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের ৫৬২’টি সেন্টারে এই মুহুর্তে ৪৭১৭ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। আরও বাড়ানো হচ্ছে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের সংখ্যা। হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৫,২৭৪ জন।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত বাংলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৩ জন। যাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন মোট ১৬ জন। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৮২ জরে শরীরে করোনা ভাইরাস অ্যাক্টিভ রয়েছে। যে পরিসংখ্যায়টি রাজ্য সরকারের দেওয়া করোনা অ্যাক্টিভ রোগির সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি (দু’য়ের ফারাকা)।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে মোট ৫ জনের। অর্থাৎ করোনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানে কোনও তফাত নেই। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, বাংলায় জনঘনত্ব খুব বেশি। সেই অনুপাতে করোনা সংক্রমণ এখনও তেমন ছড়ায়নি। কালিম্পং-এ একটি পরিবারেরই ১১ জন আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ পরিবারের মধ্যে থেকেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। যা ছড়িয়েছে ক্লোজড গ্রুপের মধ্যে।

তবে মুখ্যমন্ত্রী এদিন ফের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সাবধানতা অবলম্বন করুন। কালিম্পং, নেপাল, সিকিম, ভূটান ইত্যাদির প্রতিবেশি দেশের সীমান্তঘেঁষা জেলা হওয়ায়, এখানে করোনা প্রতিরোধে বিশেষভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনওভাবেই যাতে গোষ্ঠী সংক্রমণ না ঘটে সেদিকে সতর্ক থাকতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ একবার গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়ালে তা হলে আর ঠেকানো যাবে না।

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় হটস্পটের তালিকায় রয়েছে কালিম্পং। মুখ্যমন্ত্রী এদিন পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র হাতে করে তুলে ধরে বলেন, রাজ্যের সাত আটটি জায়গায় সীমাবদ্ধ রয়েছে করোনা সংক্রমণ। যেগুলিকে সবুজ চিহ্ন দিয়ে মার্ক করা রয়েছে। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্য হাওড়াকে হটস্পট চিহ্নিতকরণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

মমতা এদিন বলেন, এই মুহূর্তে হাওড়া জেলা হাসপাতাল এড়িয়ে চলা যায়। সেই জায়গায় সঞ্জীবনী বেসরকারি হাসপাতাল হলেও সেখানে ৩০০’টি বেডের বন্দোবস্ত রেখেছে রাজ্য সরকার। দরকার পড়লে ওখানে অ্যাম্বুলেন্সে চলে যান চিকিৎসার জন্য। খরচের জন্য ভাববেন না সেটা সরকারই দেবে। বৃহস্পতিবারই খবর আসে হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার করোনা আক্রান্ত। এম আর বাঙুরে চিকিৎসা হচ্ছে তার।

গত ২৮ মার্চ ওই হাসপাতালে একজন জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তাকে জেনারেল ওয়ার্ডেই প্রথমে রাখা হয়েছিল। ৩০ মার্চ ওই মহিলার মৃত্যুর পর তাঁর করোনা আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট আসে। ওই মহিলার সঙ্গে হাওড়া জেলা হাসপাতালের বহু নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও সংস্পর্শে এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের মন্তব্যের পর প্রশ্ন জাগে, তবে কি হাওড়া জেলা হাসপাতালকে আপাতত শাটডাউন করা হবে?