নীতি আয়ােগের ‘অর্থহীন’ বৈঠক বয়কট মমতার

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

কেন্দ্রে পুনরায় মােদি সরকার আসার পর ফের সংঘাতের পথে হাঁটলেন মমতা। আগামী ১৫ জুন, দিল্লিতে নরেন্দ্র মােদির নেতৃত্বে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে নীতি আয়ােগের যে বৈঠক হচ্ছে, সেখানে যােগ দিচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি চিঠি দিয়ে নরেন্দ্র মােদিকে জানিয়েছেন, এই নীতি আয়ােগের কোনও আর্থিক ক্ষমতা নেই। রাজ্যের পরিকল্পনাগুলি রূপায়নের কোনও অধিকার নেই তাই এই বৈঠকে যােগ দেওয়া ‘অর্থহীন’।

কিছুদিন আগেই নীতি আয়ােগের সিইও এই রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এবারের বৈঠকে কৃষি এবং কৃষি সংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে আলােচনার কথা। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে এই বৈঠকে যাবেন না, তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। কারণ এই নীতি আয়ােগের বৈঠকে যােগ দেওয়ার জন্য কোনও প্রস্তুতিই নেওয়া হচ্ছিল না রাজ্যের তরফে। এরপর শুক্রবার মমতা নিজেই একটি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, এই বৈঠকে যােগ দিয়ে কােনও লাভ নেই।


এই চিঠির সূত্র ধরে নীতি আয়ােগ জন্ম নেওয়ার সময় থেকেই মমতা তাঁর বিরােধিতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইলেন মােদিকে। প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট মােদি সরকার যােজনা কমিশনের বদলে নীতি আয়ােগের খসড়া তৈরি হয়। ২০১৫ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে এই প্রতিষ্ঠান কার্যকর হয়। এই নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ার সময় কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও পরামর্শ করা হয়নি। এই নতুন প্রতিষ্ঠানটি জন্মের সময়ই আপত্তি জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেকথা ফের এদিনের চিঠিতে উল্লেখ করেন তৃণমূল নেত্রী।

চিঠিতে যােজনা কমিশনের ঐতিহ্যের কথাও উল্লেখ করেন মমতা। ১৯৩৮ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে যে ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটি তৈরি হয়েছিল, তা-ই ছিল যােজনা কমিশনের আদিরূপ। তারপর ১৯৫০ সালের ১৫ মার্চ প্রথম যােজনা কমিশনের জন্ম হয়। এরপর বহু বছর ধরে যােজনা কমিশন কাজ করে আসছে। এই কমিশনের আর্থিক ব্যয়বরাদ্দের ক্ষমতা ছিল। বিভিন্ন রাজ্যের জেলা স্তর, ব্লক স্তর এবং পঞ্চায়েত স্তর এমনকী লােকালবডির কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য যেসব প্রস্তাব আসত, সেগুলি বিবেচনা করে বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ করত যােজনা কমিশন।

কেন্দ্রীয় সরকার অনুমােদিত প্রকল্পগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকত এই প্রতিষ্ঠানের। মােট কথা, আর্থিক বন্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যগুলির সেতুবন্ধন করত এই যােজনা কমিশন। আর তার ফলেই কেন্দ্র-রাজ্যের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামাে বজায় থাকত। এমনকী জোনাল স্তরে রাজ্যের সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা দেখা দিলে, তাকে সমাধানের পথও বাতলে দিত যােজনা কমিশন।

এদিনের চিঠিতে যােজনা কমিশনের এইসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করে তার তুলনায় নীতি আয়ােগের অন্তঃসারশূন্যতার কথা যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মমতা। সেইসঙ্গে নীতি আয়ােগের মতাে প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়ে মােদি সরকার যে প্রথম থেকেই একনায়কতন্ত্র চালাতে চেয়েছেন সেকথার উল্লেখ করেন।

জাতীয় উন্নয়নমুখী কর্মসূচিগুলির রূপায়নের জন্য ২০১৪ সালে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেইসময় মমতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যােজনা কমিশন যদি না থাকে, তার বদলে আন্তঃরাজ্য পর্ষদকে আর্থিক নীতি প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হােক। যে পর্ষদ সংবিধানের ২৬৩ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুমােদন পেয়েছিল ১৯৯০ সাল থেকে। কিন্তু কোনও কোনও প্রস্তাবই গ্রহণ না করে নীতি আয়ােগ কার্যকর করে তুলেছিলেন মােদি সরকার।

বর্তমানে বিজেপি দলের অভ্যন্তরেই অনেকে এই নীতি আয়ােগের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। নীতি আয়ােগের এক প্রাক্তন চেয়ারম্যানও নীতি আর্থিক বরাদ্দ নির্ধারণের সীমাবদ্ধতার সমালােচনা করেছেন। এইসব প্রসঙ্গের উল্লেখ করে মমতা জানিয়েছেন এই নীতি আয়ােগের মতাে একটি নিষ্ক্রিয় প্রতিষ্ঠানের বৈঠকে যাওয়ার কোনও প্রয়ােজন দেখছেন না তিনি।