মূর্তি প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল এবং বিজেপির প্রতি ক্ষোভ মমতার

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

মঙ্গলবার বিদ্যাসাগরের মূর্তি প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে ফের স্পষ্ট হয়ে উঠল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির ভাবমুর্তিই। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই এদিন বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে মােকাবিলা করতে চাইলেন মমতা। বিদ্যাসাগরের ভাঙা মূর্তি নতুন করে গড়াকে উপলক্ষ করে রাজনৈতিক ভাঙাগড়ার লক্ষ্যই সামনে এল।

নির্বাচনের আগে অমিত শাহের রােড শাে’র দিন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা থেকে ভােট পরবর্তী হিংসার জন্য বিজেপির প্রতি ক্ষোভ উগরে দিলেন মমতা। এমনকী তাঁর আক্রমণের নিশানা থেকে বাদ পড়লেন না রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও।

সােমবারই রাজ্যপাল দিল্লিতে রিপাের্ট দিয়েছেন রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়েছে বারাে জন। রাজ্যপালের এই মন্তব্যের বিরােধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যপাল যখন এই কথা বলেছেন, তখন বারােজন নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দশজনের প্রাণ গিয়েছিল। রাজ্যপাল বাড়িয়ে বলেছেন। হয়তাে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা থেকেই রাজ্যপাল এমন করেছেন। তবে রাজ্যপাল বলার পর সেই রাত্রেই অর্থাৎ সােমবারই জগদ্দলে তৃণমূলের দু’জন সমর্থক খুন হয়েছেন। তবে কি রাজ্যপাল নিহতের ঢার্গেট সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিচ্ছেন? যার হিসেব মেলাতে বিজেপি সেই সংখ্যাপূরণ করছে!


লােকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল ও বিজেপি উভয় দলের অনুগামীদেরই মুত্য মিছিল চলছে। তা নিয়ে যখন রাজ্যপাল উদ্বেগ প্রকাশ করে এলেন দিল্লিতে, ঠিক তখনই রাজ্যপালের ওপরও প্রকারান্তরে ষড়যন্ত্রের অভিযােগ তুললেন মমতা। কোনও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের অভিযােগ নজিরবিহীন।

যদিও এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, রাজ্যপালকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তাঁর বক্তৃতাকে সম্মান করি না। হেয়ার স্কুলের মাঠে বিদ্যাসাগরের মুর্তি প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে এসে মমতা ঘােষণা করেন রাজনৈতিকভাবে নিহতদের সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এই বিষয়ে তিনি প্রয়ােজনীয় তালিকা তৈরির নির্দেশও দেন মুখ্যসচিব মলয় দে’কে।

প্রসঙ্গত মূর্তি ভাঙা নিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির রিপাের্ট আসার আগেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, বিজেপির লােকরাই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। এখন যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর রােড শােতে কিছু গেরুয়া ফেট্টি পরা লােক এই মূর্তি ভেঙেছে। এই বিষয়ে যাবতীয় প্রমাণ রাজ্য সরকারের কাছে আছে। মমতা জোর দিয়ে বলেন, তৃণমূলের কেউ একাজ করেনি। এরকম করলে আমি ঠাস ঠাস করে দিতাম। আই ক্যান কন্ট্রোল মাই পার্টি।

তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে বাংলার কৃষ্টিতে আঘাত করা হয়েছে। তবে কোনও মূল্যেই বাংলাকে অপমান করতে দেব না। বাংলা খেলার পুতুল নয়, তা নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না। মমতা বলেন, চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনের অবসানে তৃণমূল এই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু কোনওদিন কার্ল মার্ক্সস বা লেনিনের মূর্তি ভাঙার কথা মাথাতেও আনেনি।

আত্মপক্ষ সমর্থনে মমতার বক্তব্য, আমার বিরুদ্ধে মুসলিম তােষণের অভিযােগ আনা হয়েছে। কিন্তু আমি তাে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। মন্দির, মসজিদ, গির্জা সব জায়গাতেই যাই। মমতা জানান, আগামীদিনে স্যর আশুতােষ মুখােপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজি নজরুল ইসলাম এবং বিদ্যাসাগরের আরও চারটি ব্রোঞ্জ মুর্তি অর্থাৎ মােট চারটি মূর্তি এই শহরে স্থাপন করা হবে।