অপরিণত কন্ঠে ‘আজাদি’ স্লোগান, খুদে মনে পড়তে পারে বিরূপ প্রভাব, আশঙ্কা মনোবিদদের

এনআরসি-সিএএ'র প্রতিবাদে খুদেরা। (Photo: IANS)

এনআরসি বিরােধী অবস্থান বিক্ষোভে সামিল ৩, ৪, ৮ বছরের খুদেরা। এমনকি মঞ্চে উঠে বড়দের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ‘আজাদি’ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্লোগানে গলা মেলাচ্ছে তারা। আর বিক্ষোভ অবস্থানে খুদেদের এই সক্রিয় অংশগ্রহণই চিন্তার ভাঁজ ফেলছে মনােবিদদের কপালে। অজান্তেই খুদে মনে বিদ্বেষের বিষ ঢুকছে বলে মন্তব্য তাঁদের।

এনআরসি এবং সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সমস্ত দেশবাসী। কলকাতা শহরে পার্কসার্কাস ময়দানের পর কলকাতা পুরভবনের সামনে নিউমার্কেট অঞ্চলেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন শহরবাসী, যেখানে অংশ নিয়েছেন বহু মহিলাও। কিন্তু শুধু মহিলারা নন, শনিবার তাদের হাত ধরে বিক্ষোভস্থলে এসে উপস্থিত হয়েছিল বহু খুদেও।

শনিবার স্কুল ছুটি। বাড়িতে কেউ নেই, তাই বাচ্চাকে নিয়েই বিক্ষোভে এসেছেন বলে দাবি বহু মায়ের। আবার একাংশের কথায়, মা রােজ কোথায় যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন করছিল বাচ্চা। তাই সঙ্গে নিয়ে আসা। শনিবার পুরভবনের সামনে বেশ কিছু খুদে, মঞ্চে বড়দের কাঁধে উঠে গলা মেলায় স্লোগানেও। কিন্তু ৩, ৪, ৫ বছরের শিশুদের বিক্ষোভ সমাবেশে যােগ দেওয়াটা এই শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন মনােবিদদের একাংশ।


মনােবিদ অভিষেক হনসার কথায়, সিএএ এবং এনআরসির সঙ্গে রাজনীতি ওতপ্রােতভাবে জড়িত। এখন থেকে যদি তাদের অপরিণত মনে এটা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যে তাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেক্ষেত্রে এই শিশুগুলি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরও এই ঘটনার প্রভাব রয়ে যাবে তাদের মনে। এমনকি ভবিষ্যতে সমাজের প্রতি বিরূপ মনােভাবও তৈরি হতে পারে তাদের মধ্যে, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে মন্তব্য অভিষেকবাবুর।

কিন্তু কেন এই শিশুদের সঙ্গে আনছেন মা বাবারা? পুরভবনের সামনে ধর্নারত ফারহান নাজকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, একপ্রকার বাধ্য হয়েই তিনি তাঁর দুই সন্তান সেজ ও ওয়াইসকে নিয়ে ধর্নাস্থলে এসেছেন। বাড়িতে তাদের খেয়াল রাখার জন্য কেউ নেই বলেও দাবি ফারহানের।

অন্যদিকে শনিবার রাজিয়া বেগমের সঙ্গে ধর্নাস্থলে এসেছিলেন তাঁর তিন সন্তান ১২ বছরের মহম্মদ আরমান, ৮ বছরের খুশি পারভিন এবং ৩ বছরের মহম্মদ কেইজান। রাজিয়াদেবীর কথায়, বাচ্চারা প্রশ্ন করছিল ধর্নাস্থলে কি হচ্ছে। তাই তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা।

এই অবস্থান বিক্ষোভের মঞ্চগুলিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন প্রেসিডেন্সি, কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। শিশুদের বিক্ষোভ সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিতি এবং স্লোগান দেওয়া প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী এবং এনআরসি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী রূপকথা বসুর কথায়, বাচ্চাদের স্লোগান দেওয়ার বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। তাই ‘সংযতভাবে স্লোগান’ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

রূপকথা জানান, যে সমস্ত স্লোগান দেওয়া হচ্ছে (ভুকমারি সে আজাদি) সেগুলি সামাজিক সমস্যার কথা ভেবে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিষয়গুলি নয়, সামাজিক সমস্যাগুলির বিষয়ে জানতে পারবেন খুদেরা, মনে করছে রূপকথা। কিন্তু সংযত স্লোগান দিলেই কি খুদে মনে বিক্ষোভের কোনও প্রভাব পড়বে না?

এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিধায়ক সুজন চক্রবর্ত। অবশ্য বলেন, এই আন্দোলনগুলি স্বতঃস্ফুর্তভাবে হচ্ছে এবং বহু মহিলা যােগ দিচ্ছেন। আন্দোলনগুলি রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক বলেই ব্যাখ্যা করেন তিনি। যদিও মনােবিদদের আশঙ্কাও সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেননি সুজনবাবু। তাঁর কথায়, মনােবিদরা যখন বলছেন, সেক্ষেত্রে তারা কিছু ভাবনাচিন্তার ওপর ভিত্তি করেই বলেছেন। এদিকে বিজেপির সায়ন্তন বসু অবশ্য বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে এই শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে, যা কখনও সমর্থনযােগ্য নয়। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও বাবা মায়ের মাথায় রাখা উচিত বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহাকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ওরা বিদেশি বাচ্চা। যদি কোনও কুশিক্ষা হয় তা হলে এদেশে নয়, অন্যদেশে তার প্রভাব পড়বে’। বিষয়টি নিয়ে মতামত জানতে শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে যােগাযােগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।