কমিশনের ‘অভূতপূর্ব’ সিদ্ধান্ত

নির্বাচন কমিশনের দফতর (File Photo: IANS)

পশ্চিমবঙ্গে সপ্তম ও শেষ দফার ভােট প্রচারের সময় কমিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। ২০১৯ সালের লােকসভা ভােট এখন শেষ পর্যায়ে।

সারা দেশে মােট সাত দফায় নির্বাচনের নির্ঘন্ট সাজিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। যার মধ্যে ৬ দফার নির্বাচন পর্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি রয়েছে আগামী রবিবার ১৯ মে তারিখের সপ্তম ও শেষ দফার নির্বাচন যার প্রচারের সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা আগামী শুত্রবার ১৭ মে বিকেল পাঁচটায়, কিন্তু ভারতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এই প্রথমবার নির্বাচনী আইনের ৩২৪ নং ধারা প্রয়ােগ করে নিজের ক্ষমতা জাহির করল কমিশন।

এই ধারায় কমিশনকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেই ক্ষমতাবলে একদিন আগেই সপ্তম দফার নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমা পশ্চিমবঙ্গে কমিয়ে দেওয়া হল। সেই মতাে আজ বৃহস্পতিবার ১৬ মে তারিখের রাত ১০টায় সপ্তম ও শেষ দফার নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়ে যাচ্ছে।


রবিবার পশ্চিমবঙ্গে ভােট হবে মােট ৯টি লােকসভা আসনে। নির্বাচন কমিশনের এহেন অভুতপূর্ব নির্দেশ এসেছে কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রােড শাে’কে ঘিরে তাণ্ডবের একদিন পরে।

মঙ্গলবার ছিল কলকাতায় অমিত শাহের ব্লেড শাে। এই ব্লোড শাে’কে ঘিরে নজিরবিহীন তাণ্ডব প্রত্যক্ষ করল কলকাতা। বােড়ি শো থেকে তাণ্ডব চালানাের অভিযােগ উঠল বিদ্যাসাগর কলেজে, যেখনে ভাঙা পড়ল দ্বিশত বর্ষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি। তৃণমুলের অভিযোগ বিজেপির বহিরাগত গুণ্ডারা বিদ্যাসাগরে মূর্তি ভেঙেছে। বিজেপির পাল্টা অভিযােগ, শাহের রােড শােয়ে ইট ছুড়ে আক্রমণ চালিয়ে প্রথম গােলমাল বাঁধিয়েছে তৃণমূলই।

মহামনীষীর মূর্তি ভাঙার নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকদের দিয়ে পুরাে ঘটনার তদন্ত হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর জেরে বুধবার দিল্লি এবং কলকাতায় পাল্টা দাবি এবং দোষারোপের পালা চলে দু’পক্ষেরই।

তৃণমুল ও বিজেপি উভয় দলই হিংসায় প্ররােচনা দেওয়ার অভিযােগ করে একে অপরের বিরুদ্ধে। বুধবার সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয় যে, পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যাসাগরের মতাে একজন মহান সমাজসংস্কারক ও শিক্ষাবিদের মূর্তি ভাঙা এবং হিংসার ঘটনায় খুবই উদ্বিগ্ন কমিশন।

পাশাপাশি, কমিশন এদিন পশ্চিমবঙ্গের দু’জন শীর্ষ আমলাকে তাঁদের পদ থেকে অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও জারি করেছে। এদের মধ্যে একজন হলেন স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য ও অপরজন হলেন রাজ্য সিআইডি’র এডিজি রাজীব কুমার। রাজীব কুমার (আইপিএস)-কে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে তাঁকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে রিপাের্ট করতে।

রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কারণ তিনি নির্বাচনের কাজে হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে অভিযােগ। স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মুখ্যসচিব মলয় দে-কে। সোমবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) আরিজ আফতাবের কাছে দফাওয়াড়ি বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ দিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযােগ জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্য, যা নির্বাচন কমিশনের চোখে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অপরাধ। সেই চিঠিতে অত্রি ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ভােট পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য প্রশাসন উভয়ের হাতেই ন্যস্ত। তাই বাহিনী পরিচালনায়, বিশেষ করে কুইক রিঅ্যাকশন টিম পরিচালনায় রাজ্যের পুলিশ অফিসারদের বাদ রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হােক।

সিইও’র কাছে পাঠানাে চিঠিতে স্বরাষ্ট্র সচিব আরও লিখেছিলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে অতিরিক্ত প্রয়ােগ করতে দেখা গিয়েছে, যা কখনও সখনও ভােটারদের প্রভাবিত করার অভিযােগে পরিণত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিবের এই চিঠিটি দিল্লিতে নির্বাচন সদনে পাঠিয়েছিল সিইও দফতর। স্বরাষ্ট্র সচিবের এই চিঠিকে ভালােভাবে নেয়নি কমিশন, একে নির্বাচনী কাজে হস্তক্ষেপ বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। সেই কারণে স্বরাষ্ট্র সচিবকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল।