সন্দেশখালির ঘটনায় মোদিকে আন্দোলনের মুখ করছে বিজেপি

কলকাতা, ১৮ ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালিতে মহিলাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। লোকসভা ভোটের মুখে সেই অভিযোগে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপিও। সুকান্ত মজুমদার ও শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে একে একে রাজ্যের নেতারা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এবার সেই রাজনীতিতে গেরুয়া শিবিরের নতুন সংযোজন মোদী।

আগামী ৮ মার্চ নারী দিবসের আগেই খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে রাজ্যের রাস্তায় নামাচ্ছে বিজেপি। নারী দিবসের আগের দিন ৭ মার্চ দলের মহিলা কর্মীদের নিয়ে তিনি বারাসতে পদযাত্রা করবেন। শনিবার বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ রাজ্য নেতাদের এব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন। তার আগের দিন অর্থাৎ ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী গঙ্গার নিচে মেট্রোর উদ্বোধন করবেন। সেই মেট্রো রুটে মোদী নিজেও সওয়ারি হবেন। সাক্ষী থাকবেন গঙ্গার নিচে মেট্রো যাত্রার সূচনাপর্বের। এছাড়া এদিন রেল সহ একাধিক সরকারি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এমনটাই জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। পরের দিন বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার সদর শহর বারাসতে মহিলাদের সঙ্গে রাস্তায় পা মেলাবেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, এর আগে রাজ্য বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে, তখন তো প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। তাহলে হঠাৎ লোকসভা ভোটের মুখে কেন মোদিকে আন্দোলনের মুখ করা হচ্ছে? জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দিল্লি থেকে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সন্দেশখালির মা-বোনদের রক্ষা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী!” সেজন্য আগামী ৭ মার্চ রাজ্যে আসবেন তিনি। এদিন উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতেই সভা করানোর ইচ্ছা ছিল তাঁদের। কিন্তু তৃণমূল সরকার এবং প্রশাসনের তরফে ‘বাধা’ দেওয়া হতে পারে। সেই কথা ভেবে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসতে সভা করবে বিজেপি। ৭ মার্চ বারাসতে সেই মহিলা ন্যায় সমাবেশে বক্তৃতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ প্রধানন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


প্রসঙ্গত আজ দিল্লিতে দলের জাতীয় কর্ম সমিতির বৈঠকে কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের পাশাপাশি সন্দেশখালির প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসে। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্য সরকারের নিন্দা করেন। সম্প্রতি সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও বিবৃতি দিয়েছেন। সন্দেশখালি পরিদর্শনে আসছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। এই ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই জাতীয় স্তরে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজেপি। দুই দিন আগে জাতীয় তফসিলি কমিশনের অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান অরুণ হালদার সন্দেশখালির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করেন। এই মর্মে তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিয়েছেন। ফলে লোকসভা ভোটের প্রাক মুহূর্তে সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপির সামগ্রিক কর্মকান্ড রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

এদিকে সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপির ভূমিকাতেও সরব হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সন্দেশখালির ঘটনার জন্য বিজেপি ও আরএসএস-কে পাল্টা দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের উপর অত্যাচার হলে আমাদের সরকার ব্যবস্থা নেবে। একটা ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে ইডিকে পাঠিয়েছে। তারপর ইডিকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি ঢুকেছে। কেউ কেউ তিলকে তাল করছেন।’’