কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ অমিত মিত্রর, বাজেট পেশ বিরোধীদের ওয়াকআউট

রাজ্য বিধানসভায় শুক্রবার বাজেট পেশ করেছেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এরপর সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ তুললেন রাজ্যের আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র।

দিন মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত হয়ে অমিত মিত্র বলেন, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে বাজেটে উল্লেখিত ১৪ হাজার কোটি টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের বৈধ প্রাপ্য টাকার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা দেওনি কেন্দ্র।


অর্থাৎ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা জিএসটি’র বকেয়া টাকা এখনও রাজ্যকে দেয়নি কেন্দ্র।

তার ওপর বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা বকেয়া রয়েছে। এরপরেও কেন্দ্র রাজ্যের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।

একদা জাতীয় জিএসটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেন, জিএসটি যখন চালু হয়েছিল, তখন কোভিডের কোনও প্রশ্নই ছিল না।

জিএসটি লাগু হওয়ার জন্য রাজ্যকে দেয় ক্ষতিপূরণের জন্য সময়সীমা তিন বছর পর্যন্ত ধার্য ছিল।

কিন্তু করোনার পরে প্রায় তিন বছর শেষ হতে চলেছে। একই সঙ্গে এবছরের জুন মাসেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময়সীমা তথা সিলিং তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করার জন্য বারেবারে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রকে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেও সিলিং বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।

এই অবস্থা শুধু এই রাজ্যেরই নয়, সব রাজ্যেরই এক অবস্থা। তা সত্ত্বেও কেন্দ্র কোনও চিন্তাভাবনা করেনি এই বিষয়ে। এটা একরকম যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অগ্রাহ্য করা। যা বঞ্চনার সামিল।

পাশাপাশি অমিত মিত্র জানান, গোটা দেশের কথা যদি ধরা যায়, তাহলে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বেকারত্ব প্রায় সাড়ে তিন কোটি। মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.০১।

যেখানে ৬ শতাংশ পার করলেই, তা রেডলাইন। মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্বের জন্য মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। আমজনতাকে পরিষেবা দিতে ব্যর্থ কেন্দ্র।

সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার একের পর এক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে।

মানুষের কথা ভেবে মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পে মানুষের হাতে সরাসরি টাকা তুলে দিচ্ছেন। যার ফলে চাহিদা তৈরি হবে। আর শিল্পে বিনিয়োগ তখনই হবে, যখন চাহিদা তৈরি হবে।

অমিত মিত্র পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ২০২০-২১ সালে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি ৭.৩ শতাংশ পিছিয়ে (ঋণাত্মক) গিয়েছিলে। সেখানে এই রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছে ১.২ (ধনাত্মক) শতাংশ।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাত্ত্বিকভাবে ম্যাক্রো ইকোনমিক নীতি অনুসরণ করার জন্যই এই সদর্থক ফল পাওয়া গিয়েছে বলে ব্যাখ্যা করেন অমিত মিত্র।

এছাড়া ঋণ এবং জিডিপির অনুপাত গোটা দেশের তুলনায় (৪০.৬৪) এই রাজ্যে অনেক কম (৩২.২৩)। রাজ্যের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির ফলেই এই সাফল্য এসেছে।

এবারের বাজেটে ঘোষিত স্ট্যাম্প ডিউটিতে দুই শতাংশ ছাড় রাজস্ব আদায় প্রায় পঁচিশ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করছেন অমিতবাবু।

এছাড়া সার্কেল রেটে কুড়ি শতাংশ ছাড়ও রাজ্যের মানুষের উপকারে আসবে। এমনটাই ধারণা তাঁর।